এমপিওভুক্তিতে বাজেটে থাকছে ১২০০ কোটি টাকা

প্রায় ৯ বছরের জট শেষে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০টির মতো প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের। বাকি ৫০০টির মতো প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা। বাকিগুলো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ জন্য আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছর শেষ হতে চললেও এ টাকা খরচ হয়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকায় এবার আর খরচ না হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধরে নিচ্ছেন। সূত্রগুলো জানায়, ঘোষণা দেরিতে হলেও নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী ১ জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা পেতে পারেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত অর্থে যেসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা উচিত, সেগুলোকেই বেছে নিতে হবে। রাজনৈতিক চাপের মুখে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনোভাবেই সে সুযোগ দেওয়া যাবে না। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না।

এমপিওভুক্তকরণের দাবি নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর এমপিও নীতিমালা তৈরি করে সরকার এবং নীতিমালার আওতায় এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া শুরু করে।

৯ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়লেও যাচাই-বাছাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অধীন মাদ্রাসা ৫৫১টি এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৭৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থী–সংক্রান্ত তথ্য, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার, অবকাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে গেলে অন্তত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। শুরুতে কয়েক ধাপে এমপিওভুক্ত করার চিন্তা করা হলেও তা আর হচ্ছে না।

>

এমপিওভুক্তির জন্য ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত
এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন ৯ হাজার প্রতিষ্ঠানের
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকায় এবার বরাদ্দ করা অর্থ খরচ হবে বলে আশা

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তিন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে দেশে। সরকারি, এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকার দেয়। এদের অবকাঠামোও তৈরি করে দেয় সরকার। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন ও কিছু ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে কিছুই পান না।

সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর বহু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য হলেও সরকার করেনি। নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয় আন্দোলনের মুখে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। এঁদের জন্য বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হয়। তবে আবেদন করা সব (৯ হাজারের বেশি) প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করলেও বছরে নতুন করে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লাগবে না।

গত ৯ বছর এমপিওভুক্তির বড় সমালোচক ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, এমপিওভুক্ত হলে কিছু শিক্ষক-কর্মচারী উপকৃত হন, শিক্ষার মানের সার্বিক কোনো উন্নতি হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে, এগুলো আবার যাচাই করতে হবে। শিক্ষা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা—এ রকম তিনটি আলাদা প্রতিবেদনের মতামত এক রকম হলে তখনই একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।