১০ বছরের বাজেটের ধারাবাহিকতা, নতুন কিছু নেই

ড. মইনুল ইসলাম
ড. মইনুল ইসলাম

গতানুগতকিভাবে অনেক বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে যে বাস্তবায়নে বড় ধরণের একটা ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রত্যেক বছরই হয়েছে, এ বছরও হবে। এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার যে ঘাটতি সেটা মোট ব্যয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণ খুব কঠিন হয়ে যাবে আগামী বছরে। এক লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৬৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ঋণ থেকে নেওয়া হবে বলে বলা হয়েছে। এটা আসলে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটাকে আমার কাছে উদ্বেগের বিষয় বলে মনে হয়েছে।

এতো বেশি ঋণ নিলে বাংলাদেশের ঋণের ফাঁদে পড়ে যাওয়ার একটা আশংকা আছে। যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জিডিপির শতাংশ অনুযায়ী এটা পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নিলে এটা ভালো হবে না বলেই আমার মনে হয়। আর এখানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরণের কিছু নেই। প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর খরচ হয়তো কিছুটা কমতে পারে। এখানে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা আছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। এতে যদি প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়ে সেটা ভালো হবে। শিক্ষার ব্যয় অর্থমন্ত্রী দেখাচ্ছেন জিডিপির তিন শতাংশের বেশি। এটা ধরা হয়েছে, ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। এটা একটা ভালো দিক যে, শিক্ষার খাতে ব্যয় জিডিপির শতাংশ হারে বেড়েছে। অন্যবারের চেয়ে এটা ভালো দিক। আগে বাজেটে এই ব্যয় তেমন বাড়েনি, সবসময় বাজেটের ১২ শতাংশের নিচেই থাকত। এবার তা ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে অর্থমন্ত্রী বলছেন। সেটা যদি বাস্তবায়িত হয় তবে তা ভালোই বলতে হবে।

যেসব জিনিসের দাম বাড়বে এর মধ্যে আছে বিড়ি–সিগারেট, মোবাইলে কথা বলা। সেগুলো ঠিকই আছে বলে আমার মনে হয়। তবে চিনির দাম ও ভোজ্যতেলের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এগুলোর দাম বাড়বে না। তবে আমার মনে হয় তা ঠিক না, আসলে বাড়বে। এমন অনেক আইটেমের দাম বাড়বে, যেগুলোর বিস্তারিত এখনো আমরা পাইনি।

এবারের বাজেটে আরেকটি অঙ্গীকার আছে সার্বজনীন পেনশন চালুর ব্যাপারে। সেটা হলে ভালো। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের ব্যাপারে কিছু কথা আছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা আছে। কীভাবে কঠোর হবেন তা বলেননি। ব্যাংকিংয়ের জন্য কমিশন করবেন বলে জানিয়েছেন। সেটা ভালো কথা। কারণ, খেলাপি ঋণ সমস্যাটা দিন দিন প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। অর্থমন্ত্রী ক্ষমতা নেওয়ার পর যেসব কথা বলেছেন, সেসব খেলাপি ঋণকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। মার্চ মাসে আগের চেয়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এসব বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এখন কী করেন সেটাই দেখার বিষয়। এসব নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি বাজেটে।

শস্যবিমার কথা বলা হয়েছে। এটা পাইলটভিত্তিতে চালুর কথা বলা হয়েছে। এটা কতটুকু কার্যকর হয় সেটাই দেখার বিষয়।

এখন জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে প্রতিনিয়ন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে যে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে তা নিয়ে কোনো কথা বলছে না তারা। এই সরকার আসলে পুঁজি লুটেরা বান্ধব হয়ে গেছে। এটা খুব দুঃখজনক। অর্থমন্ত্রীকে ব্যবসায়ী বান্ধব অর্থমন্ত্রী থেকে দেশের অর্থমন্ত্রী হতে হবে। তবে সেই পরিচয়টা আমরা পাইনি।

সবকিছু মিলিয়ে এটা গতানুগতিক বাজেটই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যেভাবে বাজেট করতেন অনেক বেশি ব্যয়, অনেক বেশি ঘাটতি এবারও তেমন হলো। এটা গত ১০ বছরের বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতা আসলে। এর বাইরে কিছু নয়।

মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়