ধনীরা পেয়েছে, কৃষক ও সাধারণ মানুষ নয়: সিপিডি

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের বিশ্লেষণ তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ছবি: রাজীব আহমেদ
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের বিশ্লেষণ তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ছবি: রাজীব আহমেদ

নতুন বাজেটে কৃষককে ধানের লোকসান বাবদ প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়সীমাও বাড়ানো হয়নি। কিন্তু সম্পদের সারচার্জের সীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ধনীরা ফ্ল্যাট কিনতেও কর ছাড় পেয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকেরাও নগদ ভর্তুকি পেয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরদিন আজ শুক্রবার এ বিশ্লেষণ তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরতে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে সংস্থাটি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সামষ্টিক বাজেট কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী এবার অনেক লক্ষ্যের ক্ষেত্রেই বাস্তবমুখী হয়েছেন। ফলে আগের দু-একটি বছরের তুলনায় রাজস্ব ও বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা কম। তিনি কর–বহির্ভূত আয় বাড়ানোর উদ্যোগ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে উন্নয়ন ব্যয় ৭ শতাংশ রাখা, শত শত নতুন প্রকল্প না নেওয়াসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান। পুঁজিবাজারে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন নেই বলে উল্লেখ করেন। তবে এ–ও বলেন, সুশাসন ছাড়া পুঁজিবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ভ্যাট আইনে জরুরি সেবা ও পণ্যে ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও ঠিকই আছে বলে উল্লেখ করেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে দেবপ্রিয়র কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাজেটে বেশি সুফল কারা পাবে? জবাবে তিনি বলেন, এটা স্বচ্ছ যে বাজেট উচ্চ আয়ের মানুষকে অনেক বেশি সুযোগ দিচ্ছে। অল্প আয়ের মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে একধরনের একটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এটা থেকে খুব বেশি উপকৃত হবে না। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ব্যয় মোট জিডিপি অনুপাতে বৃদ্ধি না পাওয়ার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যারা ব্যাংকক–সিঙ্গাপুরে গিয়ে শিক্ষা নিতে পারে না ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে না, তাদের জন্য আপনি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? গণপরিবহন–সংকটে যারা, তাদের জন্য গণপরিবহন তৈরি হচ্ছে কি না, তাদের শিশুরা সে রকম মানে উচ্চ শিক্ষা পাচ্ছে কি না, এটিই বড় বিষয়।’

দেবপ্রিয় বলেন, ‘উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া নির্ভর করছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের জন্য আমরা কী করতে পারব, তার ওপর। বিকাশমান মধ্যবিত্তই হলো চালিকাশক্তি। চিন্তা–চেতনা, উপার্জন, বুদ্ধিমত্তা—সব ক্ষেত্রে এটি হলো চালিকা শক্তি। সেই চালিকা শক্তিকে যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে তা ইশতেহারের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

যে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, সে সমাজ আজ হোক কাল হোক টেকে না, এগোতে পারে না বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, যেভাবে বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে, তাতে ৭, ৮, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি টেকানো কষ্টকর হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।

করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা ও তিন কোটি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে বায়বীয় শব্দটি ব্যবহার করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আপনারা বলছেন যে করদাতার সংখ্যা এক কোটি হবে, বলা হয়েছে শিগগিরই হবে। শিগগিরই কবে? কালকে? তিন বছর পর? পাঁচ বছর পর? কবে। কর্মসূচি দেওয়া হলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা লাগে। আপনি যখন বলেন, “আমি এটা দিয়ে এই অর্জন করতে চাচ্ছি, এই অর্জন করার জন্য এই কৌশল নিয়েছি। এই কৌশলকে কার্যকর করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্থ দিচ্ছি প্রতিষ্ঠান দিচ্ছি ইত্যাদি।” এটা যতক্ষণ না বলা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি অর্থনীতিবিদ হিসেবে আশ্বস্ত হই না। সাধারণ নাগরিক খুশি হতে পারে।’

নতুন বাজেটে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেননি বলেও উল্লেখ করেন সিপিডির ওই বিশেষ ফেলো। তিনি বলেন, সুবিধাভোগীরাই এখন নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সংলাপ পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খানসহ গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।