চাপ বাড়বে বিদ্যমান করদাতার

প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছে মেট্রো চেম্বার। প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ শঙ্কা প্রকাশ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)।
অন্যদিকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব বলেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এ সুযোগের ফলে দেশে সম্পদ ও আয়বৈষম্য আরও বাড়বে।

মেট্রো চেম্বার
শতবর্ষের পুরোনো এই বাণিজ্য সংগঠনটি বলছে, দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে গেলে বৈদেশিক বিনিয়োগসহ সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিস্বল্পতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা—এসব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ও বিনিয়োগের পথে বড় বাধা। এ ছাড়া রাজস্ব ঘাটতি ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের দুর্বলতা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করহার না কমানোয় ও ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

এমসিসিআই বলছে, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা পুঁজিবাজার চাঙা করতে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। তবে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাবে এমসিসিআই উদ্বিগ্ন। সংগঠনটি মনে করে, এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূলধন সৃষ্টি ও পুনর্বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তবে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করাকে স্বাগত জানিয়েছে তারা।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠনের যে ইচ্ছা পোষণ করেছেন, সেটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছে এমসিসিআই। গঠিত কমিশন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা সমাধানে দিকনির্দেশনা দেবে।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন ব্যবসা-বাণিজ্য জটিলতার মুখে না পড়ে, তার এবং সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য যেন করদাতাদের হয়রানি করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মেট্রো চেম্বারের নেতারা।

>
  • বাজেট প্রতিক্রিয়া
  • করপোরেট কর না কমায় এবং ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ায় হতাশ মেট্রো চেম্বার

বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের হার না কমানো এবং করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করে এমসিসিআই বলছে, মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৫ শতাংশ হলেও পাঁচ বছর ধরে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত। সংগঠনটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির সাপেক্ষে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত।

টিআইবি
এক বিবৃতিতে গতকাল সংগঠনটি বলেছে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব। এ ব্যবস্থা দুর্নীতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শূন্য সহনশীলতারও পরিপন্থী। টিআইবি মনে করে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অনিয়ম ও দুর্নীতির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং তাতে সম্পদ ও আয়বৈষম্য আরও বাড়বে। পাশাপাশি সমাজে দুর্নীতির বিস্তার ঘটতে পারে। টিআইবি আরও বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্ল্যাটের পাশাপাশি জমি কেনায়ও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করা যাবে।

এ ছাড়া সংকটাপন্ন ব্যাংক খাত সংস্কারে কার্যকর পথনির্দেশ বা পরিকল্পনা না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। এক বিবৃতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও বাজেটে ক্রমবর্ধমান সম্পদ ও আয়বৈষম্য নিরসনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না থাকার সমালোচনা করেছে।

বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও প্রত্যেক সরকার দফায় দফায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। এটি সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন। এই প্রথম অবৈধ ব্যাপারটাকে পাঁচ বছরের জন্য বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। একে চরম হতাশাজনক আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো কি কেউ নেই সরকারি অঙ্গনে। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতিতে সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ না থাকায় তা এই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।