ভ্যাট আছে ভ্যাট নেই

ভ্যাট আছে
রেস্তোরাঁয় খাবার

এসি বা নন–এসি—যেকোনো রেস্তোরাঁয় খাবার খেলেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এই রেস্তোরাঁর তালিকায় ফাস্টফুডের দোকান আছে। ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করেই ভাত, মাছ, ডালসহ সবকিছুর দাম বলবেন রেস্তোরাঁ কর্মচারীরা।
বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ বিলে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। ১ জুলাই থেকে এই ভ্যাট হয়ে যাবে ১৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিভাগ ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ঠিক করে দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগ যদি ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আগের দাম নির্ধারণ করে, তবেই ভোক্তাপর্যায়ে দাম বাড়বে না। নইলে বাড়বে বিদ্যুৎ বিল।
এসি টিকিট
বাস, ট্রেন, লঞ্চের এসি টিকিট কিনলে ভ্যাট দিতে হবে। সব ধরনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবহনসেবার ওপর নতুন আইনে ভ্যাট বসানো হয়েছে। তাই আরামের যাত্রা আরও ব্যয়বহুল হবে।
ফ্ল্যাট
নতুন ফ্ল্যাট কিনলে বেশি ভ্যাট বসবে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরে প্রতি বর্গফুটে দাম নির্ধারণ করতে হবে। পুরোনো আইনে প্রতি বর্গফুটের দাম ধরে ফ্ল্যাটের মোট দাম নির্ধারণ হয়। পরে আয়তনভেদে দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। এখন সরাসরি ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে, ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে পারে।
দেশি ব্র্যান্ড পোশাক
দেশি ব্র্যান্ড পোশাক কিনলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এখন আপনি দিচ্ছেন ৪ শতাংশ হারে। দেশি ব্র্যান্ড পোশাক ব্যবসায়ী প্রতি স্তরে যদি রেয়াত নিতে না পারেন; তাহলে দাম বাড়বে।
বোতলজাত পানি
আগের মতো বোতলজাত পানি কিনতে ভ্যাট দিতে হবে। এখনো ভ্যাট দিতে হয়। তবে বোতলজাত পানি নগরজীবনে দৈনন্দিন পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। গত কয়েক বছরে এর ভোক্তাচাহিদাও অনেক বেড়েছে। পাড়া, মহল্লা, দোকানে তো বটেই, এমনকি রাস্তার পাশে চা-পাউরুটির দোকানে এখন বোতলজাত পানি পাওয়া যায়।
আসবাব
দেশি আসবাব কিনলে ভ্যাট বাড়বে। খাট, আলমারি, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাব কেনার সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এত দিন ধরে আসবাব কেনার সময় ৪ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে এসেছেন ক্রেতারা।
সোনার গয়না
যেকোনো সোনা বা রুপার গয়না কিনতে গেলে ভ্যাট দিতে হবে। পাড়ার দোকান হোক, ব্র্যান্ডের দোকানই হোক—গয়না কিনতে গেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। এত দিন গয়নার দোকানে গেলে ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল।
কুরিয়ার সার্ভিস
একসময় কুরিয়ার সার্ভিসে চিঠিপত্র পাঠানো হতো। এখন খাট, আলমারি, চেয়ার-টেবিলসহ বড় বড় পণ্যও কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো যায়। যেকোনো ধরনের কুরিয়ার সার্ভিসকে ভ্যাটের আওতায় রাখা হয়েছে।
চা
ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম সব মানুষের কাছে চা অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এই নিত্য ভোগ্যপণ্যটির ওপর ভ্যাট আছে। বাজার থেকে প্যাকেটজাত হোক আর খোলা হোক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে ক্রেতাকে। যদি চা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে রেয়াত নিতে না পারে, তবে চায়ের দামও বাড়তে পারে।

ভ্যাট নেই

মৌলিক খাদ্য
নতুন ভ্যাট আইনে আগের মতো চাল, আটা, ময়দা, চিনি, লবণ, মাছ, মাংস, সবজিসহ কৃষিজাত মৌলিক খাদ্যপণ্য ও লবণ ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছে। শুধু সরবরাহ নয়, এগুলোর আমদানিতে ভ্যাট নেই। ফলে মৌলিক খাদ্যপণ্য কিনতে ক্রেতাকে ভ্যাট দিতে হবে না।
ভোজ্যতেল
সয়াবিন তেল ও পাম তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। সূর্যমুখীর তেল ও চালের কুঁড়ার তেল সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছে। ফলে ভোজ্যতেল কিনতে ভ্যাট লাগবে না।
মসলা
পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, জিরা ইত্যাদি মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছে। ফলে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও ভ্যাটের কারণে এসবের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
তরল দুধ
বাজার থেকে যে প্যাকেটজাত পাস্তুরিত তরল দুধ কেনেন, তার ওপর আপনাকে ভ্যাট দিতে হবে না। দুধের পাশাপাশি পনির ও মাঠাকেও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে ভ্যাটের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়বে না।
ফল
বিভিন্ন ধরনের দেশি ও আমদানি করা ফল সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু ফল বাদে বাকি ফলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আছে, যা আগেও ছিল। এতে নতুন করে ফলের দাম বাড়বে না।
বাসা ভাড়া
সাধারণ মানুষের বসবাসের বাসার ভাড়াকে ভ্যাটমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আপনার বাসা ভাড়ার ওপর ভ্যাট দিতে হবে না। একইভাবে নিবন্ধিত কারখানা, ১৫০ বর্গফুটের কম আয়তনের স্থাপনা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত কোনো স্থাপনার ভাড়ায় ভ্যাট নেই।
বাস-ট্রেনের টিকিট
সাধারণ বাস, ট্রেন ও লঞ্চের যাত্রী পরিবহনসেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত। যদি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে আপনাকে ভ্যাট দিতে হবে না। এতে এখনো ভ্যাট নেই। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ গন্তব্যে যাওয়ার ভাড়ায় ভ্যাটমুক্ত সুবিধা পাবেন।
ওষুধ ও চিকিৎসা
জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকবে। বিভিন্ন ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণের আমদানিও ভ্যাটমুক্ত করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সেবার ক্ষেত্রেও ভ্যাট নিতে হবে না। ইনসুলিন, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতেও ভ্যাট লাগবে না। তবে সব ধরনের ওষুধ ভ্যাটমুক্ত নয়।
শিক্ষা
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ভ্যাটের আওতামুক্ত। ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ও অন্যান্য ফি ভ্যাটের বাইরে থাকবে। অবশ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ভ্যাটের বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারাধীন।
বিনোদন
বই, ম্যাগাজিন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অপেশাদারি খেলাধুলা, লাইব্রেরি, জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের টিকিট, কৃষি, বন্য প্রাণী, শিল্পসাহিত্য, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ইত্যাদি প্রদর্শনীর টিকিট ভ্যাটমুক্ত। অবশ্য বিনোদনের অনেক ক্ষেত্রে আবার ভ্যাট রয়ে গেছে। যেমন সিনেমা হল, অভিজাত সামাজিক ক্লাব ইত্যাদি।