আবাসন খাতে আশ্বাসই ভরসা

প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন মাশুল, সম্পদ কর, স্ট্যাম্প ডিউটি, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং স্থানীয় সরকার কর কিছুই কমেনি। এমনকি সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি গৃহায়ণ ঋণ দিতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের পুরোনো দাবির বিষয়েও ইঙ্গিত দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আবাসন খাতে সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কিছু না থাকলেও কালোটাকা বিনিয়োগে সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। নতুন করে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে জমি কেনায়। আর ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কালোটাকা বিনিয়োগে করহার কমানো হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই অর্থের উৎস সম্পর্কে রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রশ্ন তোলা হবে না।

সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কিছু না থাকলেও বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী নিবন্ধন মাশুলসহ অন্যান্য মাশুল কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আবাসন খাতে দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা চলছে। খাতটি বিকশিত না হওয়ার অন্যতম কারণ স্ট্যাম্প ও নিবন্ধন মাশুল অনেক বেশি। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব মাশুল যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আকাশছোঁয়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনাটা এখন স্বপ্নের পর্যায়ে চলে গেছে। স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা গেলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাই বাজেটের আগে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করার দাবি করেছিল আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

সংগঠনটি বলেছিল, গৃহঋণের জন্য তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে রি-ফাইনান্সিং ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাতে সাধারণ মানুষ ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় দেড় হাজার বর্গফুট বা তার চেয়ে ছোট ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঋণ নিতে পারে। এ ছাড়া হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনকে একটি তহবিল দেওয়ার সুপারিশ করেছিল তারা। সেটি হলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ ৬-৭ শতাংশ সুদে ৩০ বছরের জন্য গৃহঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন।

ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন মাশুল, সম্পদ কর, স্ট্যাম্প মাশুল, স্থানীয় সরকার কর ও ভ্যাট ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিল রিহ্যাব। তারা বলেছিল, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় ফ্ল্যাট ও প্লট নিবন্ধনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্রেতারা। সার্কভুক্ত অন্য দেশে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪ থেকে ৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশ তা ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ।

এদিকে নিবন্ধন ব্যয় কমানোসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সুপারিশ করেছে আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এনবিআর, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সমন্বয়ে কমিটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় কমবে বলে আশা করেছিলেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত কেবল আশ্বাস মিলেছে।

জানতে চাইলে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য মাশুল কমানো না হলেও আশ্বাস মিলেছে। আশা করছি, এক–দেড় মাসের মধ্যে কাজটি হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘বাজেটে আবাসন খাত নিয়ে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এতে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেবে।’ তহবিলের বিষয়ে শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্ল্যাট ক্রয়ে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে নতুন করে কর কমানো হয়েছে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২০০ বর্গমিটারের কম ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক জায়গা কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক জায়গা কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর জমি কেনার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এত দিন গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের বেশি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক জায়গা কিনতে প্রতি বর্গমিটারে ৭ হাজার টাকা কর দিতে হতো। এসব এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক জায়গার ক্ষেত্রে কর ছিল প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য এলাকায় একইভাবে কর কমানো হয়েছে।

এ নিয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, করহার বেশি হওয়ায় খুব একটা সাড়া মিলছে না। তাই করহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, হ্রাসকৃত করহারের সুযোগ নিয়ে করদাতারা ফ্ল্যাট ক্রয় ও দালান নির্মাণে তাঁদের অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করবেন।

রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন আরও বলেন, ‘সুযোগ থাকলেও এত দিন খুব বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ (কালোটাকা) আবাসন খাতে বিনিয়োগ হয়নি। তবে আশা করছি, আবাসনে এবার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়বে।’