দিনে দিনেই মিলবে টাকা

বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর হালনাগাদ করা হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে বিএসিএইচ-২, নতুন এ নিকাশ ঘরটি ১১ জুলাই উদ্বোধনের কথা রয়েছে। বিএসিএইচ-২ চালু হলে স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরে বিদেশি মুদ্রার চেক ক্লিয়ারিং–সুবিধা চালু হবে। আর ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে একই তহবিল দিনে দুবার স্থানান্তর সম্পন্ন হবে। হালনাগাদ নিকাশ ঘরে আমেরিকান ও কানাডীয় ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, জাপানিজ ইয়েন ও ইউরো মুদ্রার চেক নিষ্পত্তি হবে ও ইএফটি করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, পেমেন্ট সিস্টেম আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে আগামী ১১ জুলাই বিএসিএইচ-২–এর কার্যক্রম শুরুর আশা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে।

বর্তমানে চালু থাকা স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের মাধ্যমে ইএফটি লেনদেন আদেশ রাতে সম্পন্ন হয়। আর বিদেশি মুদ্রার চেক ক্লিয়ার ও ইএফটি করার সুবিধাও নেই। ফলে বিদেশি মুদ্রার চেক ক্লিয়ার হতে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। হালনাগাদ নিকাশ ঘর চালু হলে এক দিনেই বিদেশি মুদ্রার চেক নিষ্পত্তি হবে।

লেনদেন ব্যবস্থার হালনাগাদকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। এ নিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘নতুন স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর লেনদেন ব্যবস্থাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে। এর ফলে বিদেশি চেক এক দিনেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আর দিনে দুবার ইএফটি করা যাবে, যা আর্থিক লেনদেনের গতি বাড়িয়ে দেবে।’

জানা যায়, স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর ২০১০ সালের নভেম্বরে কার্যক্রম শুরু করে। তাতে করে ব্যাংকগুলো একে অপরের চেক জমা ও লেনদেন নিষ্পত্তির সুযোগ পাচ্ছে। প্রথম দিকে এক লাখ বা তার বেশি অঙ্কের টাকার চেকের লেনদেন নিষ্পত্তি হতে কমপক্ষে এক দিন সময় লাগত। এখন এক দিনেই তা নিষ্পন্ন হয়ে সুবিধাভোগীর ব্যাংক হিসাবে চলে যাচ্ছে। আর ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে কোনো চেক ছাড়াই অর্থ লেনদেন করা যাচ্ছে। এতে ইলেকট্রনিক আদেশ দিলেই নির্দিষ্ট দিনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর হয়ে যাচ্ছে। এখন বিভিন্ন সরকারি ভাতা, কর্মীদের বেতন, ডিপিএসের টাকা জমাসহ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পরিশোধ ও জমায় ইএফটি ব্যবহার হচ্ছে।

>হালনাগাদ হচ্ছে নিকাশ ঘর
এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমার পর এক বেলার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে
বিদেশি মুদ্রার চেকও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা চালু হচ্ছে আগামী ১১ জুলাই

ক্লিয়ারিং হাউসের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে কয়েক বছর আগে নতুন প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর নতুন নিকাশ ঘরটি চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর পিছিয়ে যায় আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া। সম্প্রতি বিএসিএইচ–২ সফটওয়্যার স্থাপন সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন উদ্বোধনের আগে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে দেশি-বিদেশি মুদ্রার চেক ক্লিয়ার ও ইএফটি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লেনদেনের প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে বিদেশি মুদ্রার চেক আদান-প্রদান করতে হয়। আবার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকেরা বিদেশি মুদ্রার চেক গ্রহণ করেন। এ জন্য এখন ড্রাফট পে চেক দেওয়া হয়, যা নিষ্পত্তি হতে বেশ সময় লেগে যায়। হালনাগাদ নিকাশ ঘর চালু হলে এক দিনেই বিদেশি মুদ্রার চেক নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। তাতে আমাদের লেনদেন ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগোবে।’

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘দিনে দুবার ইএফটি চালু হলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। তাঁরা একই অর্থ চাহিদামতো ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে গ্রাহকের সুবিধা বাড়বে। তাঁরা ব্যাংকমুখী হবেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের মাধ্যমে গত এপ্রিলে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার চেক নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই মাসে চেক নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৫৯০টি।