সংস্থার ব্যর্থতার দায় সরকারের

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে সরকারের প্রচ্ছন্ন দায় দাঁড়াবে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। তবে ৩০ জুনের পরও এ দায় কার্যকর থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এ দায় প্রকৃত দায় নয়, তবে যেকোনো সময় দায়ে পরিণত হতে পারে।

একটি অর্থবছরের খরচ মেটাতে সরকার বাজেটের ২৫ শতাংশই দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। একইভাবে সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোকেও ঋণ নিতে হয় । এর ফলে সরকারের ওপর সেসব ঋণের একধরনের দায় সৃষ্টি হয়। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এ ধরনের দায়কে বলা হয়েছে ‘প্রচ্ছন্ন দায়’।

সাধারণত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষির ক্ষেত্রে নেওয়া ঋণের জন্য সরকার গ্যারান্টি (নিশ্চয়তা) বা কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। দেশি ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংক থেকেও এ ঋণ নেওয়া হয়। ১৩ জুন জাতীয় সংসদে পেশ হওয়া বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, ‘এসব ঋণের অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো ফেরত দিতে ব্যর্থ হলেই তা পরিশোধের দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। কাজেই সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার ওপর এর (প্রচ্ছন্ন দায়) প্রভাব রয়েছে।’

অনেক ক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থাগুলো ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বাস করতে চায় না বলেই সরকারকে এ গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দিতে হয়। সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯-এ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে এ নিশ্চয়তা দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তবে নিশ্চয়তা দেওয়ার আগে সরকারি নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করা হয়।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, কৃষি খাতের নিশ্চয়তাগুলো নিয়ে একটু জটিলতা রয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বাজেটের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮টি প্রকল্পের বিপরীতে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের নিশ্চয়তা দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগেরবার এ অঙ্ক আরও বেশি অর্থাৎ ৪৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ছিল। অবশ্য তার আগেরবার ছিল ১৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।

জ্বালানি খাতে নিশ্চয়তা এবার ৮টি, অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। আগেরবার ছিল ৩টি, অর্থের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। সে হিসেবে জ্বালানি খাতে এবারের নিশ্চয়তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তেল আমদানির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিদেশি একটি সংস্থা থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তার বিপরীতেই এ নিশ্চয়তা।

কৃষি ও বিমান

কৃষি খাতে সাতটি বিষয়ে দেওয়া সরকারের নিশ্চয়তার স্থিতি এবার ৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ছয়টি। নিশ্চয়তাগুলো ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ের। তবে গতবার ১৬টি বিষয়ে এ স্থিতি ছিল ৯ হাজার ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০০৪ সালের নিশ্চয়তার স্থিতিও বাজেট বইয়ে দেখানো হচ্ছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এগুলোর কাগজপত্র পেতে সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিমানের জন্য কয়েক বছর ধরে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো নিশ্চয়তা দিয়ে আসছিল সরকার। গতবার ৫টি বিষয়ে নিশ্চয়তা ছিল ৬ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। তার আগেরবার ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার নিশ্চয়তা। গতবারের তুলনায় এবার নিশ্চয়তার পরিমাণ একটু কমেছে। এবার বিমানের জন্য সোনালী ব্যাংককে (ইউকে), ইউএস এক্সিম ব্যাংক ও এইচএসবিসিকে ৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ডিসি-১০ কেনার অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতায় ১৯৮৭ সালে সরকারকে বিমানের জন্য ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল।

টেলিযোগাযোগ ও বিবিধ

টেলিযোগাযোগ খাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য এইচএসবিসিকে দুই বছর আগে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। গতবার এবং এবার একই বিষয়ে একই অঙ্ক দেখানো আছে নিশ্চয়তা হিসেবে। জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল টেলিফোন স্থাপন এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া ছিল দুই বছর আগে। তবে এবার এ খাতে নিশ্চয়তা দেওয়ার তালিকায় এ দুটি নাম দেখানো হয়নি।

 জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল টেলিফোন স্থাপনকে এবার বিবিধ খাতে দেখানো হয়েছে, গতবারও তাই দেখানো হয়েছিল। এ খাতের মধ্যে বাংলাদেশ পাটকল সংস্থা, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের ঋণের বিপরীতে সরকার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংককে।

বিবিধ খাতে গতবার ৮ হাজার ১৭ কোটি টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও এবার ১১ হাজার ২৭২ কোটি টাকা হয়েছে।