বাজেটে সংখ্যালঘুদের জন্য ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দাবি

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বিভিন্ন খাতে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর চেয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৩ জুন। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বিভিন্ন খাতে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর চেয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৩ জুন। ছবি: আহমেদ দীপ্ত

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, প্রতি বছরের মতো এবারের অর্থবছরের বাজেটেও সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বিভিন্ন খাতে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর চেয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। এই বৈষম্য নিরসনে এবারের বাজেটে সংখ্যালঘুদের জন্য ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হোক।

আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা এসব কথা বলেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনায় মাথাপিছু বরাদ্দের চিত্রটি করুণ ও দুর্ভাগ্যজনক। প্রকল্পবাদে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুযায়ী, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু বরাদ্দ যেখানে ১১ থেকে ১২ টাকা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাথাপিছু বরাদ্দ সেখানে মাত্র ৩ টাকা।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জনসংখ্যার ব্যাপক অংশ হিসেবে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় অবশ্যই মোট বরাদ্দের বড় অংশ পাবে। কিন্তু মাথাপিছু বরাদ্দের ক্ষেত্রে কেন বৈষম্য হবে? আমরা মনে করি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে বিদ্যমান বৈষম্য রেখে দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সমভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে দেখা যায়, দেশের জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে গত তিন অর্থবছরে ৮৯১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য অনুরূপ মডেল মন্দির, প্যাগোডা বা গির্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কল্যাণে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ফাউন্ডেশন গঠন করা হোক। পাশাপাশি প্রতিবছরের বাজেটে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আনুপাতিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা হোক। এই বাজেটে বৈষম্য অবসান করতে ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হোক।

পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, এবারের অর্থবছরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেট ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রকল্পেই বরাদ্দ ১ হাজার ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অন্য সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৬৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা মাত্র।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পরিষদের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশন করা, চলতি অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া, বিগত চার দশকে বৈষম্য নিরসনে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য শুমারি করা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বরাদ্দ দেওয়া।