'যাদের টাকা যত বেশি, তাঁদের ট্যাক্স তত কম'

‘বাজেট ২০১৯-২০: কতটা উন্নয়নের, কতটা বৈষম্যের’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ২৬ জুন। ছবি: মাইদুল ইসলাম
‘বাজেট ২০১৯-২০: কতটা উন্নয়নের, কতটা বৈষম্যের’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ২৬ জুন। ছবি: মাইদুল ইসলাম

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বিশ্বের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোতে ট্যাক্স রেশিও অনেক বেশি। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে সেসব দেশে ধনবান, সম্পত্তিশালীদের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে সরকার। আর বাংলাদেশে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের টাকাপয়সা যত বেশি, তাঁদের ট্যাক্স তত কম। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, যাদের বেশি টাকা, তাদের টাকার কোনো আইনগত হিসাব নেই।’

বুধবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাজেট ২০১৯-২০: কতটা উন্নয়নের, কতটা বৈষম্যের’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের একটি কক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে। দেশের সকল অর্থনীতিবিদ এটা স্বীকার করছেন এবং সরকারের মন্ত্রীরাও বলেন যে, আমাদের বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমানো দরকার। কিন্তু যে হিসাব অনুযায়ী বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে, সে হিসাবটা অসম্পন্ন। কারণ দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীদের আয়ের হিসাব কেউ জানে না। তাঁদের আয়কে ভদ্রভাবে বলা হয়, অপ্রদর্শিত আয়।’ তিনি বলেন, ‘এই অপ্রদর্শিত আয়ের বড় অংশই আসলে চোরাই (কালো) টাকা। বাংলাদেশে এখন যে জিডিপি, সেই জিডিপির অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে এই চোরাই টাকার অর্থনীতি। এই চোরাই অর্থনীতি বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপরাধের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়।’

তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু, অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে প্রধান ঋণখেলাপিদের নাম নাই। নির্দিষ্ট শর্তে ঋণ খেলাপিদের পার পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাংকে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, তা পূরণ করা হচ্ছে জনগণের করের টাকা দিয়ে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণের টাকা দিতে গিয়ে শিক্ষা খাতের বাজেট কমে যাচ্ছে। একটি দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অথচ বিশ্বের কাছে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ ও পারমাণবিক ব্যয়কেও শিক্ষা খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গ্লোবালি সরকার যেসব রিপোর্ট দেয়, বেশির ভাগেই ভুল তথ্য এবং অতিরঞ্জিত থাকে। যেমন ঢাকা শহরের বেশির ভাগ জায়গায়ই নিরাপদ পানি নাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে সরকার রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে ৯৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করে বলে দেখানো হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়মের সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমরান হাবিব আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান।