সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তোলা ও কেনার হিড়িক

উৎসে কর বাড়লে মুনাফা কমবে ও বিনিয়োগ করলে কর ছাড়—এই দুই কারণে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তোলা ও কেনার চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর গুলিস্তানের জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) ও মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহকদের চাপ আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। এই দুই কার্যালয়েই প্রতিদিন গ্রাহকের দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের স্থানীয় শাখায়ও ভিড় লেগে আছে। এতে সেবা দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

এদিকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বিতরণ ও বিক্রি সামাল দিতে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়কে। প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর বাড়ানোর ঘোষণার পরই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে সংসদে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। 

১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়। আগে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের মুনাফার ওপর উৎসে কর (চূড়ান্ত দায়) দিতে হতো ৫ শতাংশ, নতুন অর্থবছর থেকে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত করহারে পরিবর্তন না হলে ১ জুলাই থেকে বর্ধিত হারে উৎসে কর কাটা শুরু হবে। পুরোনো গ্রাহকদের যাঁরা ১ জুলাইয়ের পর মুনাফা তুলতে যাবেন, তাঁদেরও এই বাড়তি কর দিতে হবে। তাই এখন বিভিন্ন ব্যাংক, ডাকঘরে মুনাফা তুলতে গ্রাহকের বাড়তি ভিড় লেগে আছে। অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা নিয়মিত মুনাফা না তুলে কয়েক মাস পর একবারে তোলেন। 

এদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে সাধারণ করদাতারা নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত-সুবিধা পান। তাই কর রেয়াত-সুবিধা নিতে অনেক করদাতা ৩০ জুনের আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। তাতে করে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও বেশ বেড়ে গেছে। এতে বিক্রিরও চাপ বেড়েছে। 

গত মঙ্গল ও গতকাল বুধবার রাজধানীর ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়সহ মতিঝিলের একাধিক ব্যাংক ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকেই সঞ্চয়পত্র কেনা, মুনাফা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকের দীর্ঘ লাইন। যাঁদের বেশির ভাগই প্রবীণ ও মহিলা। 

>১ জুলাই থেকে উৎসে কর বাড়তে পারে
১ জুলাইয়ের পর মুনাফা তুলতে যাবেন, তাঁদেরও এই বাড়তি কর দিতে হবে
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে সাধারণ করদাতারা নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত-সুবিধা পান
অনেক করদাতা ৩০ জুনের আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন

রাজধানীর গুলিস্তানে ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল কথা হয় মিরপুরের বাসিন্দা তাপসী রায়ের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার সঞ্চয়পত্রে তাঁর ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতি মাসেই মুনাফা পেলেও তা উত্তোলন করেন ছয় মাস পরপর। জুলাইয়ে মুনাফা উত্তোলন করলে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে—এমন খবরে আগের সব মুনাফা তুলতে এসেছেন। 

জানতে চাইলে জিপিওর সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (সঞ্চয়) মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে সময়মতো মুনাফা উত্তোলন করেন না। কর বাড়ানো হবে—এমন খবরে সবাই মুনাফা তুলে ফেলছেন। আবার অনেকে নতুন করেও সঞ্চয়পত্র কিনছেন। এর ফলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গ্রাহকের চাপ বেশি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে দেখা যায়, মুনাফা তুলতে দীর্ঘ চারটি সারিতে দাঁড়ানো কয়েক হাজার গ্রাহক। সেই সঙ্গে রয়েছে নতুন করে সঞ্চয়পত্র কেনার দীর্ঘ লাইনও। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ জনকে সেবা দেওয়া হতো। বাজেট ঘোষণার পর প্রতিদিন সেবা নিতে আসছেন ৫ হাজারের বেশি গ্রাহক। বাধ্য হয়ে মসজিদ থেকে মাইক এনে নাম ঘোষণা করতে হচ্ছে। যাঁরা চারটার মধ্যে টোকেন নিতে পারছেন, তাঁদের সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর সেবা দিতে রাত ১১টা পর্যন্ত সময় লাগছে। 

 জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মাছুম পাটোয়ারী বলেন, উৎসে কর বাড়ানো হবে—এমন খবরে গ্রাহকের মুনাফা তোলার চাপ বেড়ে গেছে। ফলে রাত ১১টা পর্যন্ত সেবা দিতে হচ্ছে।