নতুন-পুরোনো সব সঞ্চয়পত্রেই উৎসে কর ১০ শতাংশ

সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র

নতুন-পুরোনো সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।

অর্থবিলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপে প্রস্তাবের পর সংসদের ভেতরে এবং বাইরে এ নিয়ে সমালোচনা হয়। বাজেট পাসের পর দেখা যায়, প্রস্তাবিত হারই বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের দিক থেকে বিভ্রান্তি কাটছিল না।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন যাঁরা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে আসছিলেন, তাঁদের জন্যও নতুন হারে কর আরোপ হবে, নাকি নতুন ও পুরোনো সবার জন্যই ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর চালু হবে? যাঁরা মুনাফার টাকা তোলেননি, তাঁদের ক্ষেত্রেই-বা কী নিয়ম হবে—এসব প্রশ্ন আসছিল। বাজেট পাসের পর আমরা স্পষ্ট করলাম যে সবার জন্যই ১০ শতাংশ উৎসে কর।’

এদিকে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদপ্তর এর আগে তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, অনলাইন পদ্ধতির বাইরে আর সঞ্চয়পত্রের লেনদেন করা যাবে না। আসল ও মুনাফা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল আগের দিনের তারিখ দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সিস্টেমের আওতায় অর্থাৎ অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে অর্থ বিভাগ গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাক অধিদপ্তর এবং সোনালী ব্যাংককে যে চিঠি দিয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালের প্রজ্ঞাপনে সে কথাগুলোই আবার বলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় অর্থ বিভাগ ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করেছে। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এটি চলমান।

>নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ
উৎসে করের এই হার ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বিষয়টি স্পষ্ট করেছে
জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন, ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক
নগদে ১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এতে টিআইএন লাগবে না

প্রজ্ঞাপনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো কথা বলা হয়নি। যদিও অর্থ বিভাগের গত ২৯ মে তারিখের ভিন্ন এক চিঠিতে দেখা যায়, সব জেলাকে মে এবং সব উপজেলাকে জুন মাসের মধ্যে অনলাইন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

অর্থ বিভাগ এবং সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, এখন থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) এবং একটি ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। আর নগদে মাত্র এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এতে টিআইএন লাগবে না। গোটা খাতকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার এই নিয়ম চালু করেছে।

নজরুল ইসলাম নামের একজন গ্রাহক বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের বড় অংশ কিনে রেখেছেন ধনীরা। উৎসে কর বাড়ানোয় তাঁদের কিছুই হবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আমার মতো লোকের যে মরণ দশা!’

যদিও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ব্যাংকে টাকা রাখলে যে হারে কর কাটা হয়, সঞ্চয়পত্রে কাটা হতো তার চেয়েও কম হারে। উৎসে কর ১০ শতাংশ করে বরং কিছুটা সামঞ্জস্য আনা হয়েছে, যা ইতিবাচক।

আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ যদি আগামী দুই বছর পরে শেষ হয়, তাহলে ১ জুলাইয়ের আগের তিন বছরের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ এবং ১ জুলাইয়ের পরের সময়ের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপই যৌক্তিক হবে। নইলে তা আন্তর্জাতিক কর-রীতির লঙ্ঘন হবে। এ বিষয়েও স্পষ্টীকরণ দরকার।’