'খেলাপি ঋণের কারণেই সুদের হার বেশি'

রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ে আজ বুধবার আয়োজিত ‘এবারের বাজেট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। ছবি: প্রথম আলো।
রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ে আজ বুধবার আয়োজিত ‘এবারের বাজেট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। ছবি: প্রথম আলো।

লাগামহীন খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংকঋণের সুদের হার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।

তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাংকঋণের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণ কিন্তু ‘কস্ট অব ফান্ড’ কিংবা ‘ম্যানেজমেন্ট কস্ট’ না। খেলাপি ঋণের কারণেই সুদের হার বেশি। দয়া করে খেলাপি ঋণ কমানোর দিকে নজর দিন। এটি কমানো গেলে অবশ্যই সুদের হার কমে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ে আজ বুধবার আয়োজিত ‘এবারের বাজেট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব কথা বলেন তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান আতিউর রহমান।

তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাজেটে অনিচ্ছাকৃত খেলাপিদের এক্সিট পলিসি দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। ইতিমধ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া খেলাপিদের নতুন করে কেন আবার এক্সিট পলিসি দরকার। মনে হচ্ছে, সম্পূর্ণভাবে তাদের মাফ করে দেওয়ার একটা চিন্তাভাবনা চলছে।

বিআইবিএমের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, ‘বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কী ব্যবস্থা নেবেন, সেটির কোনো উল্লেখ নেই। তা ছাড়া ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কীভাবে চিহ্নিত করা হবে? এটি যদি রাজনৈতিকভাবে কিংবা কোনো একটি জব্বার টাওয়ারে বসে সেটি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে সঠিক হবে না।’

চলতি অর্থবছরের বাজেটকে উচ্চাভিলাষী, কিন্তু সময়োপযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ, মোবাইল কলরেটের ওপর সারচার্জ বৃদ্ধি, ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোর সমালোচনা করেন তিনি।

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনি ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, যারা টাকা চুরির জন্য ব্যাংক ঋণ নেয়, তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই সক্ষমতা আছে। কিন্তু তাদের আইনি ক্ষমতা দেওয়া দরকার।

নাগরিক সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কে এম জমসেদ উজ জামান প্রমুখ।