স্যানিটারি ন্যাপকিনে ৯০ টাকা দামে ১০ টাকা ভ্যাট

নারীদের ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) রয়েছে। তবে সরকার এটি নতুন করে আরোপ করেনি। উল্টো নতুন করে এ খাতের কোম্পানিগুলোর আমদানি করা কাঁচামালে সব সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট তুলে নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য স্থানীয় সরবরাহ পর্যায়ে ন্যাপকিনের ওপর ভ্যাট রয়েছে, হার ১৫ শতাংশ। একটি কোম্পানি হিসাব দিয়েছে, তাদের ৯০ টাকা খুচরা মূল্যের ন্যাপকিনের একটি প্যাকেটে প্রায় ১০ টাকা ভ্যাট হিসেবে সরকারের কোষাগারে যায়।

কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট তুলে নেওয়ার সুফল কতটুকু? কোম্পানিগুলো বলছে, এর ইতিবাচক প্রভাব খুব বেশি পড়বে না। কারণ, আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালে আগে থেকে তেমন কোনো সম্পূরক শুল্ক ছিল না। ভ্যাট যা ছিল, তা সরবরাহ পর্যায়ে দেওয়া ভ্যাট থেকে রেয়াত নেওয়া যেত। 

ন্যাপকিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এ খাতের কোম্পানিগুলোর সমিতির আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক কমালে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট তুলে নেওয়া হলে দামের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে প্রভাব পড়ত। তিনি বলেন, ভারতে কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনে কর তুলে নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, হিন্দুস্তান টাইমস-এর গত বছর জুলাই মাসের এক খবর অনুযায়ী ভারতে ন্যাপকিনে ১২ শতাংশ গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি) তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী দেশে ডায়াপার ও ন্যাপকিনের বাজারের আকার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ বাজারের ৯০ শতাংশ দেশীয় কোম্পানিগুলোর দখলে। এখানে বিনিয়োগ করেছে স্কয়ার, এসিআই, বসুন্ধরা, ইনসেপ্‌টা, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপসহ ৯টি কোম্পানি।

ভ্যাট কত?

একটি কোম্পানি হিসাব দিয়েছে যে তাদের ৯০ টাকার একটি প্যাকেটে সাড়ে ১২ টাকা শুল্ক-কর হিসেবে সরকারের কোষাগারে যায়। এর মধ্যে ১০ টাকা ভ্যাট, বাকিটা অন্যান্য কর। ২০০ টাকা খুচরা মূল্যের এক প্যাকেট ন্যাপকিনে ২২ টাকা ভ্যাট ও ৫ টাকা কর আসে। 

এনবিআর গত ৩০ জুন এক প্রজ্ঞাপনে ন্যাপকিনের সাতটি কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়। কোম্পানিগুলো জানায়, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত দুটি এইচএস কোডে (আমদানিতে পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর) তারা কাঁচামাল আমদানি করে না। বাকি পাঁচটি কোডের চারটিতে আগে থেকেই কোনো সম্পূরক শুল্ক নেই। একটিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে, যা এবারের বাজেটে তুলে নেওয়া হয়। এসব কাঁচামালের প্রতিটিতেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ছিল, যা-ও এবার তুলে নেওয়া হয়। তবে কাঁচামালের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও চারটিতে ৩ শতাংশ করে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে, যা এখনো দিতে হবে।

এসিআই কনজিউমার ব্র্যান্ডসের ব্যবসায় পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকার স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে পারে। এতে দাম কমবে। 

এনবিআরের জবাব

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ন্যাপকিনে ভ্যাট আরোপের বিষয়ে প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলেছে, ভ্যাট আরোপের প্রচারণা মিথ্যা। এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব তারিক হাসান বলেন, নতুন বাজেটের কারণে ন্যাপকিনের খুচরা মূল্য কোনোভাবেই বৃদ্ধির সুযোগ নেই। বরং দেশীয় কোম্পানির খরচ কমার কারণে খুচরা মূল্য কমানোর সুযোগ তৈরি হবে। 

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি করা স্যানিটারি ন্যাপকিনে মোট করভার ছিল প্রায় ১২৮ শতাংশ, যা এ বছর বিশেষ কোনো হেরফের হয়নি।