পাঁচ কোটি টাকার লেনদেনে লাগবে বিশেষ সফটওয়্যার

>লেনদেনের হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এনবিআর নির্দেশিত বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বছরে পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেই বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। সেখানে প্রতিটি লেনদেনের তথ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফটওয়্যার ব্যবহারের আগে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের আওতায় ভ্যাটসংক্রান্ত যাবতীয় হিসাব সেই সফটওয়্যারে রাখতে হবে। এনবিআর এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ রাখা বাধ্যতামূলক করেছে। 

এনবিআর এই বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য ১১টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে না নিয়েও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এনবিআর নির্দেশিত সফটওয়্যার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও নিতে পারবে। এর মানে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে এখন একই রকম হিসাবপদ্ধতিতে লেনদেনের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। 

গত ৩০ জুন এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইনে অনলাইনে হিসাব রাখাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমদানিকারক ও উৎপাদন, পাইকারি বা সরবরাহ; এমনকি খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদেরও বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। 

৩০ জুন পর্যন্ত এনবিআর থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের বার্ষিক লেনদেন পাঁচ কোটি টাকার বেশি, তাদের নতুন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। 

 জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান প্রথম আলোকে বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব রাখার পদ্ধতিটি অবশ্যই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনবে। এই উদ্যোগটি ভালো। তিনি মনে করেন, অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, যারা বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করে। সে ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে কী ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে, এর দাম কত হবে, সেটা জানা দরকার। ছোট ব্যবসায়ীরা এই বাড়তি খরচ কীভাবে করবেন, তাও সরকারের বিবেচনায় রাখা দরকার। তাই তিনি পাঁচ কোটি টাকার সীমা কিছুটা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। 

সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য 

সফটওয়্যারটিতে কেনার হিসাব রেজিস্ট্রার ও বিক্রয় চালানে কোনো তথ্য এন্ট্রি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ধরনের হিসাবে আপডেট হয়ে যাবে। সফটওয়্যারে বিভিন্ন মূসক হারসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকবে। প্রতি মাসে এনবিআরের দাখিলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক হিসাবপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত ও প্রিন্ট নেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রতিটি লেনদেনের তথ্য আলাদাভাবে সংরক্ষিত থাকবে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সফটওয়্যার থেকে শুধু একবারই মূল মূসক চালানপত্র প্রিন্ট করা যাবে। কোনো কাটছাঁট ও পুনরায় প্রিন্ট নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। মূসক চালানপত্রে সময় ও তারিখ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাপা হবে। এর ফলে মূসক চালান নকল করার সুযোগ থাকবে না। তবে মূল মূসক চালানের অনুলিপি প্রিন্ট করা যাবে, যেখানে জলছাপে অনুলিপি লেখা থাকতে হবে। 

প্রতিদিন যত লেনদেন হবে, তা কম্পিউটার জেনারেটেড রিপোর্টে সংরক্ষিত থাকবে। যেমন: চালানপত্র, ডেবিট বা ক্রেডিট নোট, ক্রয় রেজিস্ট্রার, বিক্রয় রেজিস্ট্রার, চলতি হিসাব, দাখিলপত্র ইত্যাদি। কেউ যদি পণ্য ফেরত দেয় কিংবা ক্রয় আদেশ বাতিল করে, তাও সফটওয়্যারের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। 

কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সফটওয়্যার সন্নিবেশিত করলেও তাতে মূসক কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ‘অ্যাকসেস’ সুবিধা থাকতে হবে। এর ফলে মূসক কর্মকর্তারা চাইলে সফটওয়্যারে ঢুকে যেকোনো বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন। 

যেসব প্রতিষ্ঠান এখন বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআর নির্দেশিত বৈশিষ্ট্য অনুসারে সফটওয়্যার হালনাগাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের লাভ হবে। ওই ব্যবসায়ীও যথাযথভাবে হিসাব রাখতে পারবেন, তিনি কী কিনছেন, কী বিক্রি করছেন। এতে সহজেই তিনি ভ্যাটের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু সফটওয়্যার ব্যবহার আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাই এই নির্দেশ না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।