সরবরাহব্যবস্থা ঋণে আগ্রহ বাড়ছে

জেএইচ ট্রান্সপোর্ট ২০১২ সালে দুটি কাভার্ড ভ্যান দিয়ে পরিবহন ব্যবসা শুরু করে। আর এখন ৮০টির বেশি পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক তাদের। প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি ব্যবহৃত হয় মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের পণ্য সরবরাহে। আর এ কাজ পেয়েই (ওয়ার্ক অর্ডার) আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নেয় জেএইচ ট্রান্সপোর্ট। পরে এসব ঋণ শোধ করে দেয় গাড়ি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান। আর এমন ঋণসুবিধা পেয়ে আজ বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে জেএইচ ট্রান্সপোর্ট।

শুধু ওয়ার্ক অর্ডার ঋণ নয়, ফ্যাক্টরিং, ডিস্ট্রিবিউটর ফাইন্যান্সিং এখন অর্থায়নের নতুন খাত হয়ে উঠেছে। আর সরবরাহব্যবস্থার এসব ঋণে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও। তবে এখনো এসব ঋণের কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি, এ কারণে খাতটি চাহিদা অনুযায়ী বিকশিত হতে পারছে না।

জেএইচ ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্যাদেশের বিপরীতে আমরা ঋণ নিই। তাতে ব্যবসায় আমাদের সুবিধা হয়েছে।’

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘ভারতে ফ্যাক্টরিংয়ের নীতিমালা আছে, তাদের এসএমই উদ্যোক্তারাও ভালো সুবিধা পায়। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই, এরপরও আমরা ঝুঁকি নিয়ে এ ধরনের ব্যবসায় ঋণ দিয়ে যাচ্ছি। এ খাতের জন্য একটি নীতিমালা থাকলে তাতে উদ্যোক্তাদের অনেক সুবিধা হতো। আমরা এ সেবার জন্য ব্লক চেইন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করছি। দুই বছর পর এ প্ল্যাটফর্ম সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেব।’

সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে ঋণ দিলেও কোনো কার্যাদেশের বিপরীতে ও পণ্য সরবরাহের জন্য ঋণ দেয় না। মূলত এসব ঋণে কোনো ধরনের জামানতের সুযোগ না থাকায় ব্যাংকগুলো আগ্রহ না থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ সেবায় যুক্ত। 

>অর্থায়নের নতুন খাত
নতুন ধরনের ঋণে ব্যাংকগুলো খুব বেশি আগ্রহ না দেখালেও এগিয়ে এসেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা

কারা পায় ঋণ

যখন কোনো গ্রাহক কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কার্যাদেশ পায়, সে আদেশের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণসুবিধা নিতে পারে। একেই বলা হয় ওয়ার্ক অর্ডার ফাইন্যান্সিং। এ ক্ষেত্রে আদেশদাতা প্রতিষ্ঠানের সম্মতির পরই গ্রাহককে ঋণসুবিধা দেওয়া হয়। আর কার্যাদেশদাতা প্রতিষ্ঠান সরাসরি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে বিলের অর্থ পরিশোধ করে। 

আবার যখন কোনো গ্রাহক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন করে বিলের জন্য আবেদন করে এবং সেই বিল পেতে দেরি হলে, বিলের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। একেই বলা হয় ফ্যাক্টরিং। এ ক্ষেত্রেও কার্যাদেশদাতা প্রতিষ্ঠানের সম্মতির প্রয়োজন হয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণকাজ, পণ্য সরবরাহ আদেশের বিপরীতে এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়।

আবার বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকেরাও ঋণ নিতে পারেন, যাকে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউটর ফাইন্যান্সিং। ফলে পরিবেশকেরা ঋণ নিয়ে পরবর্তী পণ্যের জন্য আদেশ দিতে পারেন। আর পণ্য বিক্রির পর টাকা শোধ করেন পরিবেশকেরা।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এসএমই বিভাগের প্রধান আহমেদ রশিদ বলেন, এ ধরনের আর্থিক সেবার ঋণগ্রহীতা তার দৈনন্দিন আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। তবে ২০ বছরে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থায় এ ধরনের সেবার প্রভাব তেমন লক্ষণীয় নয়। কারণ, অনেক সময় কার্যাদেশদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণদাতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধে আগ্রহ দেখায় না। আবার এমন সেবা পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতিও নেই।

কার কত ঋণ

জানা গেছে, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ১৯৯৯ সালে এ ধরনের ঋণ সেবা কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ২০০৬ সালে এ ধরনের সেবা চালু করে এখন পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে এ সেবা চালু করে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ঋণ দিয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। আর আইপিডিসি ফাইন্যান্স ২০১২ সালে এ সেবা শুরু করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। বেসরকারি খাতের দি সিটি, ইস্টার্ণসহ কয়েকটি ব্যাংকও এ ধরনের ঋণ দেওয়া শুরু করেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব সেবা দেশের অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে। তবে নীতিমালা না থাকায় সবাই এগিয়ে আসছে না। এ ধরনের ঋণে ঝুঁকিও আছে। কারণ, কার্যাদেশদাতা প্রতিষ্ঠান অনেক সময় শর্ত ভঙ্গ করে গ্রাহককে টাকা দিয়ে দেয়, আবার ভুয়া বিলের ঘটনাও ধরা পড়ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকিব খান বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সরবরাহব্যবস্থায় যত অর্থায়নের প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না। কারণ, জামানত ছাড়া সবাই ঋণ দিতে চায় না। তাই খাতটির বিকাশে নীতিমালা করা দরকার।