রড-সিমেন্টের বাজারে অস্থিরতা

রডের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি রডের দাম ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পিছিয়ে নেই সিমেন্ট, বস্তাপ্রতি দাম বেড়ে গেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। চলতি সপ্তাহ শেষে এ দাম আরও বাড়তে পারে। 

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি টন ৬০ গ্রেডের রডের দাম কোম্পানিভেদে ৬৪ হাজার থেকে ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট কোম্পানিভেদে বিক্রি হয় ৩৯০ থেকে ৪৩০ টাকায়। সামনের সপ্তাহে সিমেন্টের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ, বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিমেন্ট উৎপাদকেরা।   

ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেটে কাঁচামাল ও উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর এবং পরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় রডের দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ সমন্বয় করার জন্য রডের দাম আরও বাড়বে। একবারে দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারা বড় ধরনের ধাক্কা খাবেন, তাই দাম বাড়ানো হবে কয়েক ধাপে।

গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোড ও নয়াবাজারে রডের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ দোকানেই রডের মজুত তুলনামূলক কম। হাতে গোনা দু-চারটি ছাড়া অধিকাংশ দোকানে ক্রেতাও নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলমালিকেরা রড দিচ্ছেন না। 

জানতে চাইলে এমএস রড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রডের দাম নিয়ে আমরা হযবরল অবস্থায় আছি। দাম বেড়ে গেছে। কারখানা থেকে রড পাচ্ছি না। বেচাবিক্রি নেই। অনেক ব্যবসায়ী দোকানই খুলছেন না।’ 

অবশ্য কারখানা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের রড না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদন বন্ধ করি নাই। আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত রড আছে। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনছেন না।’ তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের বাজার স্থবির হয়ে আছে। 

>রডের দাম টনপ্রতি তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
সিমেন্টের বেড়েছে বস্তায় ১০ থেকে ২০ টাকা


ইস্পাত খাতের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড বিএসআরএম রডের দাম টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎপাদন ব্যয় সমন্বয় করতে রডের দাম আরও বাড়াতে হবে।’ 

বাজেট ঘোষণার পর বিএসএমএ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ভ্যাটের হার ৫৪৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, বিলেট ও রড বিক্রিতে টনপ্রতি ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য টনপ্রতি রডে ১০ হাজার ৯২৫ টাকা দাম বাড়বে।

সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম গতকাল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কমপক্ষে টনপ্রতি রডের দাম ৭ হাজার টাকা বাড়াতে হবে মিলমালিকদের। তবে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাটের কারণে সেটি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।      

এদিকে বাজেটে কর আরোপ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রভাবে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম ৫০ টাকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট কোম্পানিভেদে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩০ থেকে ৪৭০ টাকা হবে। 

প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৩ শতাংশ উৎসে কর ও ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। কাঁচামাল আমদানি থেকে বিক্রি পর্যন্ত যে বাড়তি কর আরোপ করা হয়েছে, তাতে প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৫৩ টাকা খরচ বাড়বে। তাই সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

চট্টগ্রামের চকবাজারের ভান্ডার ট্রেডিংয়ের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বস্তাপ্রতি ১০-২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিলাররা জানিয়ে দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বাড়তি দরে সিমেন্ট কিনতে হবে। ফলে আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়তি দর কার্যকর হতে পারে।’