পণ্য রপ্তানিতে ৪০০০ কোটি ডলারের মাইলফলক

চামড়া ও চামড়াপণ্য, পাট ও পাটপণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমে গেছে। তবে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, টেরিটাওয়েলে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় সদ্য বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেষপর্যন্ত দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। যদিও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। 

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হওয়া ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ রপ্তানি বেশি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত জুনে ২৭৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও এই আয় ২০১৮ সালের জুনের চেয়ে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। 

বিদায়ী অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে বছরটিতে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। আর বিদায়ী অর্থবছরের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। 

এদিকে পোশাকশিল্পের মধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭২৪ কোটি ডলারের। প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে ১ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানি বাড়লেও বিভিন্ন কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে মূল্য সংযোজন খুব একটা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে প্রচলিত বাজারে ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দিয়েছে সরকার। এতে করে রপ্তানিকারকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তবে ডলারের বিপরীতে ৫ টাকা অবমূল্যায়ন করা হলে আর কিছু লাগত না।’ 

>সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। বছর শেষে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১০ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থবছরে পোশাকের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় চামড়া খাত থেকে এসেছে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে খাতটির রপ্তানি আয় নিম্নমুখী। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য থেকে এসেছে। এই আয় গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। 

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চামড়ার মতো হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিও কমেছে। ৮৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হলেও তা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানিও কমে গেছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৮১ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। 

ৃরপ্তানি বাড়াতে কী করতে হবে সেটি জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি খাতগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করতে হবে সরকারকে। কাস্টমসকে ঢেলে সাজাতে হবে। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন দরকার। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক। ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কোনো শিল্পকারখানাই টিকে থাকতে পারবে না। তাই ব্যাংক খাতকে সবার আগে ঠিক করতে হবে।’