যুক্তরাজ্যে আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশিরা

যুক্তরাজ্যে আয়-রোজগারে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশিরা। শ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর লোক গড়ে যা আয় করে, বাংলাদেশিদের গড় আয় তার চেয়ে ২০ শতাংশ কম। গতকাল বুধবার দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (দ্য অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস বা ওএনএস) বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আয়ের তারতম্যের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ঘণ্টাপ্রতি আয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, অশ্বেতাঙ্গ লোকজনের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ মানুষ গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি আয় করে। তবে বাংলাদেশি মানুষের সঙ্গে এ পার্থক্য ২০ শতাংশ।

গড় আয়ে শ্বেতাঙ্গরা সামষ্টিকভাবে অশ্বেতাঙ্গ লোকজনের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু একক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তারা চীন ও ভারতীয়দের তুলনায় পিছিয়ে। দেশটিতে ঘণ্টাপ্রতি সবচেয়ে বেশি আয় করে চীনা লোকজন। তাদের ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় ১৫ দশমিক ৮ পাউন্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতীয়দের গড় আয় ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ৫ পাউন্ড। ঘণ্টায় ১২ দশমিক ৩ পাউন্ড গড় আয় নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। আর শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকদের অবস্থান হলো চতুর্থ। ঘণ্টায় তাঁদের গড় আয় ১২ পাউন্ড।

১০টি ভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত এই আয়ের চিত্রে একদম নিচের অবস্থানে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের গড় আয় ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৬ পাউন্ড। ঘণ্টায় ১০ পাউন্ড গড় আয় নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে পাকিস্তানিরা।

তবে নারী-পুরুষের আয়বৈষম্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। অন্য সব জাতিগোষ্ঠীতে নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম আয় করে। একমাত্র বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে গড়ে সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি আয় করে। অবশ্য ওএনএস বলছে, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম নমুনা নিয়ে নারী-পুরুষের আয়বৈষম্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাস্তবিক চিত্র কিছুটা ভিন্ন হতেও পারে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, যে জনগোষ্ঠীর আয় যত বেশি, সেই জনগোষ্ঠীর নারী ও পুরুষের আয়বৈষম্যও সবচেয়ে বেশি। যেমন ভারতীয় পুরুষেরা ভারতীয় নারীদের চেয়ে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি আয় করে। আর চীনের ক্ষেত্রে এ পার্থক্য ১৯ দশমিক ১ শতাংশ।

যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এবং যুক্তরাজ্যের বাইরে জন্ম নেওয়া লোকদের মধ্যেও বড় ধরনের আয়ের তারতম্য দেখা গেছে গবেষণায়। যেমন যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকের চেয়ে ৮ শতাংশ কম আয় করে। যুক্তরাজ্যের বাইরে জন্ম নেওয়া একজন বাংলাদেশির আয় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ কম।

যুক্তরাজ্যে কর্মজীবীদের সংগঠন ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক ফ্রান্সেস ও’গ্র্যাডি বলেন, নির্মম বাস্তবতা হলো আধুনিক এই সময়েও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয় বড় ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণে অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্মীদের জাতিগত বেতনের চিত্র (এথনিসিটি পে গ্যাপ) প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য নিরসনে যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যে ‘জেন্ডার পে গ্যাপ’ প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশটির নারীরা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছে।