কৃষকের ১০ টাকার তিন লাখ ব্যাংক হিসাব স্থবির

যশোরে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে কৃষকের ১০ টাকার হিসাব রয়েছে ৩ লাখ ৪১ হাজার। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ব্যাংক হিসাবে কৃষকের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, খেত পরিচর্যা, সেচ ও আগাছা দমন এবং সরকারি গুদামে ধান ও গম বিক্রির টাকা জমা হয়। কৃষক চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলেন। অবশিষ্ট প্রায় তিন লাখ ব্যাংক হিসাবে কোনো সঞ্চয় ও লেনদেন হয় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর সূত্র জানায়, সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভর্তুকি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে এবং কৃষকদের সাধ্যমতো ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়। কৃষকেরা মাত্র ১০ টাকা জমা দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ও তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকের যেকোনো শাখাতে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক। এ হিসাবে ন্যূনতম স্থিতির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যাংকগুলোও এই হিসাবের বিপরীতে কোনো প্রকার মাশুল বা ফি আদায় করে না। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া কৃষি উপকরণ সহায়তা সনদের বিপরীতে কৃষককে ব্যাংকে আমানত হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। শুরুতে জনপ্রিয়তা পেলেও বেশির ভাগ কৃষক লেনদেন না করায় ব্যাংক হিসাবের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে জেলায় কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ জন কৃষক সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১০ টাকার হিসাব খুলেছেন। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৪৩ হাজার ৬৯৩, শার্শা উপজেলায় ৪০ হাজার ৮৫০, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৪৬ হাজার ৪২৮, চৌগাছা উপজেলায় ৩৮ হাজার ৭৪০, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩৫ হাজার ১৩৫, অভয়নগর উপজেলায় ২৮ হাজার ৫৯৯, মনিরামপুর উপজেলায় ৬৫ হাজার ৬২৭ এবং কেশবপুর উপজেলায় ৪১ হাজার ৯৬৬ জন কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে। 

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে এ হিসাব খোলার পরপরই কৃষকদের সেচ খাতে ডিজেলে দেওয়া ভর্তুকির টাকা জমা পড়ে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে আউশ প্রণোদনার টাকা কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। ২০১৮ সাল থেকে আউশ প্রণোদনার টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। চলমান কয়েকটি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, খেত পরিচর্যা, সেচ ও আগাছা দমন এবং সরকারি গুদামে ধান ও গম বিক্রির ভর্তুকির টাকা কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। কৃষক চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলেন। এ ছাড়া কৃষকেরা আর তেমন ব্যাংকমুখী হন না। বর্তমানে জেলায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ব্যাংক হিসাব থেকে কৃষক সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভর্তুকির টাকা তোলেন। 

অভয়নগর উপজেলার কোদলা গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ টাকা দিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খুলেছিলাম। এরপর একবার ডিজেলে ভর্তুকির টাকা তুলেছি। আউশে প্রণোদনার টাকা কখনো পাইনি। ২০১০ সালের পর আমি আর কখনো ব্যাংকে কোনো লেনদেন করিনি। হিসাব কী অবস্থায় আছে জানি না।’ শার্শা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ‘ব্যাংকে হিসাব খোলার পর একবার মাত্র ব্যাংক থেকে ডিজেলে ভর্তুকির টাকা তুলেছিলাম। এরপর কখনো লেনদেন করিনি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. এমদাদ হোসেন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষক চাইলে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে পারেন। আমরা তাঁদের ব্যাংকমুখী করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, খেত পরিচর্যা, সেচ ও আগাছা দমনের টাকা কৃষকের হাতে না দিয়ে যেন ব্যাংক হিসাবে দেওয়া হয়। এতে ওই ব্যাংক হিসাবগুলো সচল হয়।’