মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই

>সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বছর শেষে মূল্যস্ফীতির সার্বিক গড় ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গতবারের মতো এবারও মূল্যস্ফীতি নির্ধারিত লক্ষ্যের মধ্যেই থাকল। সদ্যবিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। সরকারি হিসাবে, বছরজুড়ে ৫ দশমিক ৩৫ থেকে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে মূল্যস্ফীতি। গত অর্থবছরে চালের দামও খুব একটা বাড়েনি। তবে মাঝেমধ্যে কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়েছে। তা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে মানুষকে মূল্যস্ফীতির আগুনে খুব বেশি পুড়তে হয়নি।

বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। জুন মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের পর দেখা গেছে, বছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতির গড় দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশে। অর্থাৎ বছরের শুরুতে সরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, বছর শেষে তার মধ্যেই ছিল মূল্যস্ফীতি। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ফলে আগের বছরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমেছে। 

মূল্যস্ফীতি হলো মানুষের ওপর একধরনের করের মতো। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তা বেশি দামে কিনতে হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির আয় না বাড়লে বাড়তি দামে জিনিসপত্র কিনতে তাঁর ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। যদি এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ হয়, তাতে ওই ব্যক্তির আয় না বাড়লেও একই ধরনের পণ্য ও সেবা কিনতে ৫ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। বিবিএসের হিসাবে, খাদ্যপণ্য কিনতে এ দেশের মানুষ অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ করে। খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল কেনায় বেশি টাকা খরচ করে সীমিত ও গরিব মানুষ। তাই চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি বাড়ে। 

বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল মে মাসে, ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ছিল গত ডিসেম্বরে, ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত জুলাই মাসে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস মূল্যস্ফীতি টানা কমেছে। তাতে গত ডিসেম্বর মাসে তা ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। অবশ্য এরপর টানা পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরপর গত জুন মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশে নেমে আসে। তাতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার রশিতে টান পড়ে। 

জুনে মূল্যস্ফীতি কমেছে 

গত অর্থবছরের জুনে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। জুনে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিগত চার মাসের মধ্যে জুন মাসেই সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি হয়েছে। 

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য দেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির তথ্য হিসাব করে থাকে। বিবিএসের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, চাল, ডাল, শাকসবজির দাম জুন মাসে কমেছে। 

মূল্যস্ফীতি কমার কারণ সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্ষাকালে মূল্যস্ফীতি একটু বেশি থাকে। তবে নিত্যপণ্যের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ এখন বেশি। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য থাকলে দাম কমে যায়। এর প্রতিফলন ঘটেছে মূল্যস্ফীতিতে। তিনি বলেন, চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ সব নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেশ ভালো। 

গত জুন মাসে সার্বিকভাবে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী, গত মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত মে মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি কমে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ হয়েছে। গত মে মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। 

বিবিএস বলছে, গত জুন মাসে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। গত মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আর গ্রামে ছিল এ হার ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। 

মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে না, এমন তথ্য পাওয়া যায় বিবিএসের জাতীয় মজুরি সূচক থেকে। মানুষের আয় কতটা বাড়ল কিংবা কমল, তা জাতীয় মজুরি হার সূচক দিয়ে বোঝানো হয়।