চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা কার্যত নড়বড়ে

>বর্ষণ ও সাগর উত্তাল থাকায় নৌপথে বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ। সড়কপথে পানি জমে জট। রেলপথে ধীর গতি।
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

ভারী বর্ষণ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা কার্যত নড়বড়ে হয়ে গেছে। নৌপথে সাধারণ পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ ও কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল অস্বাভাবিক কমে গেছে। রেলপথে কনটেইনার পরিবহনের গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। আবার বন্দরমুখী সড়কে জটে পড়ে সড়কপথেও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ১০ দিন ধরে তিন পথে পণ্য পরিবহনে এ অবস্থা চলছে।

বর্ষণের কারণে আমদানি–রপ্তানি পণ্য ওঠানো–নামানোসহ পরিচালনকাজ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে শুরু হয়েছে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ। তাতে এখনই জট ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। আবার আগামী মাসে ঈদের ছুটির সময় পণ্য পরিবহনে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মূলত সাগর উত্তাল ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দর থেকে তিন পথে পণ্য পরিবহনব্যবস্থায় ব্যাঘাত হচ্ছে। ভারী বর্ষণ কমলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা যাবে। তিনি জানান, বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসে আমদানিকারকদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। নৌপথে কনটেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রেলপথেও কনটেইনার পরিবহন বাড়ানোর জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে রপ্তানি পণ্য পৌঁছানো এবং বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করে কারখানায় নেওয়াই এখন প্রধান মাথাব্যথা। বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চালানো উচিত। না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরও পণ্য পরিবহনে সংকট থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

নৌপথ এখন নাজুক

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত ৩০ জুনের পর থেকে শুরুতে সাগর উত্তাল থাকায় বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য স্থানান্তর কার্যক্রম কার্যত ব্যাহত হতে থাকে। এ সময় বড় জাহাজ থেকে পণ্য স্থানান্তরের জন্য লাইটার জাহাজ সাগরে যেতে পারছে না। প্রতিদিন ৩০–৪০টি লাইটার জাহাজ পণ্য স্থানান্তরে নিয়োজিত থাকলেও তা নেমে আসে তিন–চারটিতে। ৬ জুলাই থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কার্যত বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তরকাজও বন্ধ হয়ে যায়। তাতে বহির্নোঙরে ৩৫টি জাহাজে আটকা পড়েছে প্রায় ১১ লাখ টন আমদানি পণ্য।

পণ্য স্থানান্তর করতে না পেরে গত ১০ দিনে কর্ণফুলী নদীতে খালি লাইটার জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮১টিতে। গত শুক্রবার ১৬টি জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হলেও গতকাল ভারী বর্ষণের কারণে সেগুলোও পণ্য স্থানান্তর করতে পারেনি।

একই অবস্থা কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রেও। ৩০ জুন বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরের অদূরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পানগাঁওমুখী করিম শিপিংয়ের জাহাজ কেএসএল গ্লাডিয়েটর থেকে ৪৩ কনটেইনার সাগরে পড়ে যায়। এরপরই এই নৌপথে নিয়মিত জাহাজের সংখ্যা কমে একটিতে নেমে আসে। ১ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ১১ দিনে মাত্র চারটি জাহাজ বন্দর থেকে আমদানি পণ্য পরিবহন করেছে।

সড়কপথে জট

যানজটের কারণে পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে খালি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান নেওয়া এবং পণ্য বোঝাই করে আবার কারখানায় পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে এক-দুদিন বাড়তি সময় লাগছে। একই অবস্থা আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বেসরকারি ১৭টি ডিপোতেও।

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দিন দিন ব্যবসা সহজ হওয়া দরকার। বর্ষণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বিষয়টি খুব গুরুত্ব নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

রেলপথে ধীরগতি

রেলপথে গত মে মাস থেকেই পণ্য পরিবহনে ধীরগতি চলছে। রেলপথে পণ্য পরিবহনের জন্য যে হারে পণ্য আমদানি হচ্ছে, সে হারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওয়াগন দিতে না পারায় এ সংকট।