পিপলস লিজিংয়ের সাবেক ১১ পরিচালক-কর্মকর্তার সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক নয় পরিচালক ও দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে সোমবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, কো অপারেটিভ সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে এ নিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত আদেশ দিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার। একই সঙ্গে তাদের সম্পত্তি হস্তান্তরেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আমরা তা পালন করতে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি।’

জানা গেছে, নয় পরিচালকের মধ্যে তিনজনই শামসুল আলামিন গ্রুপের মালিকপক্ষের। তাঁরা হলেন, নার্গিস আলামিন, হুমায়রা আলামিন ও আরেফিন শামসুল আলামিন। শামসুল আলামিন গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে আবাসন, স্পিনিং, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতে। তাদের কাছে পিপলসের পাওনা ৭৪ কোটি টাকা।

শাস্তির মুখে পড়া বাকি ছয় পরিচালকের মধ্যে এম মোয়াজ্জেম হোসেন বর্তমানে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক ও মতিউর রহমান সাবেক পরিচালক। বর্তমানে মতিউর রহমানের স্ত্রী কামরুন নাহার ব্যাংকটির পরিচালক। পিপলসে মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্তমানে কোনো দেনা নেই। মতিউর রহমানের কাছে ৮৪ কোটি টাকা পায় পিপলস লিজিং।

শাস্তির মুখে পড়া বাকি চার সাবেক পরিচালক হলেন, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায়, খবিরউদ্দিন মিয়া ও এম শহীদুল হক। এর মধ্যে খবির উদ্দিনের কাছে পিপলসের পাওনা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ও বিশ্বজিত কুমার রায়ের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

শাস্তির মুখে পড়া সাবেক দুই কর্মকর্তা হলেন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোস্তাক আহমেদ ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক নিপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত। তাদের কাছে পিপলসের পাওনা যথাক্রমে ১৪ কোটি ও দেড় কোটি টাকা।

সাবেক পরিচালক ইউসুফ ইসমাইল প্রশ্ন তুলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ঋণ ২০১৫ সালের জুন মাসে পরিশোধ করা হয়েছে। এ জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। এখন কী কারণে আমাকে জড়ানো হচ্ছে?’

এদিকে আদালতের আদেশে পিপলস লিজিংয়ে সাময়িক ভিত্তিতে অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান খান অবসায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা তো দূরের কথা, সুদও দিতে পারছে না। আর ভাবমূর্তি-সংকটে পড়ে নতুন তিন বছরের বেশি সময় ধরে আমানত আসা বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা দেশের আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত জুন মাসে জাতীয় সংসদে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণগ্রহীতা ও খেলাপি গ্রাহকের তালিকা দিয়েছেন। সেখানে পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি হওয়ার তথ্য মিলেছে। প্রতিষ্ঠান পাঁচটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) লিমিটেড ও প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এর মধ্যে শুধু পিপলস লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।