পিপলসে ডুবছে আর্থিক খাত

একে তো টানা দরপতন, তার ওপর পিপলস লিজিং বিলুপ্তির ঘোষণা। দুইয়ে মিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের কোম্পানির শেয়ারের দামে চরম দুর্দিন চলছে। এ খাতের কোনো কোনো শেয়ারের বাজারমূল্য ৮ কার্যদিবসের ব্যবধানে অর্ধেক হয়ে গেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন বা বিলুপ্তির ঘোষণা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই মূলত আর্থিক খাতের শেয়ারের দামে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ খাতের তালিকাভুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিচ্ছে পারছে না। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ঋণখেলাপির যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে পিপলস লিজিংসহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়। পিপলস লিজিং ছাড়া অন্য তিনটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স। এর বাইরে প্রাইম ফাইন্যান্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টও রয়েছে খেলাপির তালিকায়।

৯ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের বিলুপ্তির খবরটি দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই দিন থেকেই আর্থিক খাতের শেয়ারের দামে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাজারের টানা দরপতন। দুইয়ে মিলিয়ে এ খাতের লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে গেছে। টানা পতনের কারণে গত সপ্তাহ শেষে নতুন করে আর্থিক খাতের আরও দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ খাতের তালিকাভুক্ত ২৩ কোম্পানির মধ্যে ৯টির দামই ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। ২৩ কোম্পানির মধ্যে ১৫টি মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে এ শ্রেণিভুক্ত, ৫টি দুর্বল মৌলভিত্তির জেড শ্রেণিভুক্ত এবং ৩টি মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে বি শ্রেণিভুক্ত।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৯ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮ কার্যদিবসে আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটেছে বিআইএফসির। ৮ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশের বেশি কমে নেমে এসেছে ২ টাকা ৯০ পয়সায়। ২০১৩ সালের পর থেকে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এ কারণে ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত।

আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফাস্ট ফাইন্যান্স। ৮ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ টাকা বা ৩৩ শতাংশের বেশি কমে ৪ টাকায় নেমে এসেছে। এ কোম্পানিটিও ২০১৪ সালের পর থেকে শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এ কারণে এটিও জেড শ্রেণিভুক্ত। ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহ শেষে দরপতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল আর্থিক খাতের।

আর্থিক খাতের কোম্পানির এ দুরবস্থার কারণ জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের খবরে এ খাতের সব শেয়ারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারী এ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। উল্টো হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। পিপলস ছাড়াও এ খাতের আরও কয়েকটি কোম্পানির অবস্থা খুবই নাজুক। সেগুলোর বিষয়েও পিপলস লিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ।