যত আগ্রহ হাওরের মাছে

এবারই প্রথম ভৈরবের উপজেলা মৎস্য দপ্তরে বসেছিল মাছের মেলা।  ছবি: প্রথম আলো
এবারই প্রথম ভৈরবের উপজেলা মৎস্য দপ্তরে বসেছিল মাছের মেলা। ছবি: প্রথম আলো

ইলিশ দুটির ওজন ৪ কেজি ৩০০ গ্রাম। ভৈরব নৈশ মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী নুরু মিয়া পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে মাছ দুটির দাম চান ২২ হাজার টাকা। ওই দামেই মাছ দুটি বিক্রি হয়ে যায়।

সেলিম মিয়ার ডালায় ছিল চিতল, বোয়াল আর আইড় মাছ। একটি চিতলের ওজন ১২ কেজি ৫০ গ্রাম। দাম হাঁকাচ্ছেন ২ হাজার ২৫০ টাকা কেজি। সেলিম জানান, ক্রেতারা হাওর থেকে আনা মাছের সন্ধান করছেন বেশি।

ভৈরবের মাছের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। সারা দেশে এই জনপদের পরিচিতির একটি অংশ হাওরের মিঠাপানির মাছকে ঘিরে। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা আর সুনামগঞ্জের হাওর থেকে আনা নানা প্রজাতির মাছের একটি অংশ ভৈরবের মাধ্যমে বাজারজাত হয়ে থাকে। তারপর ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বোয়াল, আইড়, বাইম, কালবাউশ, বেলে, পাবদা, কই, মাগুর, শিং, বাংলা, চিংড়ি, রিটা, কাচকি, গোলশা, শোল, টাকি, গুতুমসহ অন্তত অর্ধশত প্রজাতির মাছ।

মাছের এই রাজ্যে এবারই প্রথম উপজেলা মৎস্য দপ্তর ভৈরবে মাছের মেলার আয়োজন করেছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে রোববার এই মেলা বসে উপজেলা পরিষদ ভবনের মাঠে। সকাল সাতটা থেকে ব্যবসায়ীরা নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে মেলায় ভিড় জমান।

বিল্লাল মিয়া বিক্রি করছিলেন কালিবোয়াল। একটি ১১ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের কালিবোয়াল দেখা গেল তাঁর ডালায়। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের কালি নদীর এই বোয়ালের স্বাদ মনে রাখার মতো। কালিবোয়ালটির দাম চাওয়া হয় প্রতি কেজি এক হাজার টাকা। একই ডালায় থাকা ১০ কেজি ৯০০ গ্রামের আইড় মাছটি এক হাজার দুই শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সায়দুল্লাহ মিয়া মাছের মেলার উদ্বোধন করেন। এই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন, জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লতিফুর রহমানসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে উপজেলা মিলনায়তনে স্টলের সৌন্দর্য, মাছের বৈচিত্র্য, আকার, সতেজতা ও দেশীয় মাছের উপস্থিতির দিকটি বিবেচনায় এনে তিনজন ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম হয় মেসার্স আদর্শ মৎস্য ভান্ডার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় যথাক্রমে কাদির মিয়া ও জান্নাত মৎস্য ভান্ডার।

উৎপাদনের দিক বিবেচনায় পুকুরে ৮.৩৭ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করে প্রথম হন উপজেলার বাউশমারা গ্রামের ইকবাল মিয়া। দ্বিতীয় হন চরকালিকাপ্রসাদ গ্রামের ইসলাম উদ্দিন। তৃতীয় হন রাজনগর গ্রামের জাহের মিয়া।

জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লতিফুর রহমান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মেলা শুরু করেছি। ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আশা করছি এই মেলা একদিন ঐতিহ্যে পরিণত হবে।’