বলপূর্বক টাকা আদায়ের কৌশল নজিরবিহীন: গ্রামীণফোন

গ্রামীণফোনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মাইকেল ফোলি। সঙ্গে আছেন ভারপ্রাপ্ত চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত । ছবি: সংগৃহীত।
গ্রামীণফোনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মাইকেল ফোলি। সঙ্গে আছেন ভারপ্রাপ্ত চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত । ছবি: সংগৃহীত।

মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন বলেছে, ‘ত্রুটিপূর্ণ অডিটের দাবিকৃত অর্থ আদায়ে বিভিন্ন প্রকার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) প্রদান স্থগিতকরণের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য বিটিআরসি জবরদস্তিমূলক কৌশল নিয়েছে।’ এর প্রতিবাদ জানিয়ে আলোচনা ও সালিসের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরটি জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চরম সিদ্ধান্তটি কোনো ভাবেই গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে নেওয়া হয়নি। বরং এ সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের স্বাধীনভাবে সেবা গ্রহণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে মানসম্পন্ন ফোন-কল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ডিজিটাল মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অধিকারকে খর্ব করছে।

গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, ‘ব্যবসায়িক কোন্দল নিরসনের উপায় হিসেবে কখনোই গ্রাহকদের স্বার্থ, জাতীয় অর্থনীতি কিংবা দেশের ভাবমূর্তিকে জিম্মি করা উচিত নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এহেন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অন্যান্য পক্ষের ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তা সত্যিই দুঃখজনক।’

মাইকেল ফোলি আরও বলেন, ‘নীতিগতভাবে, পদ্ধতিগতভাবে এবং বস্তুনিষ্ঠতার আলোকে এই অডিটের প্রতিবাদ করার আমাদের আইনত অধিকার রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের বলপূর্বক টাকা আদায়ের কৌশল নজিরবিহীন এবং এইরূপ আচরণ এই বিরোধপূর্ণ অডিটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।’ তিনি বলেন, সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুমোদন স্থগিতকরণের ফলে বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে। এরূপ সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী নেটওয়ার্কের বিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে এবং দেশের ডিজিটালাইজেশনের অগ্রযাত্রায় তা বাধাস্বরূপ। একটি সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্তে টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত সহযোগী, ডিজিটাল সেবার উদ্যোক্তা এবং আইসিটি ফ্রিল্যান্সাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত অডিটের নীতিগত ও পদ্ধতিগত অসংখ্য ত্রুটিবিচ্যুতির তথ্য ত্রুটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন এগুলো অডিটের ফলাফলকে পরিষ্কারভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যে স্পেকট্রাম ব্যবহারের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, তা বিটিআরসির ডিমান্ড নোটের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। তবে অডিটের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, ডিমান্ড নোটের নিরূপণ পদ্ধতিতে বিটিআরসি নিজেই ভুল করেছে। এ ক্ষেত্রে এই ভুলের জন্য বিটিআরসিকে দায়ী করার বদলে বিটিআরসি নিযুক্ত অডিট প্রতিষ্ঠান দাবি করে গ্রামীণফোন শুধু এই ভুলের মাশুলই দেবে না, এর ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদও প্রদান করবে। এ ছাড়াও, ভ্যাটসংক্রান্ত বিষয়সমূহ, যা মাননীয় আদালতে বিচারাধীন, অস্বাভাবিকভাবে সেগুলোও এই বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ অডিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
মাইকেল ফোলি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে এই অডিটে গ্রামীণফোনের উত্থাপিত সকল যুক্তিই উপেক্ষিত হয়েছে এবং বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়েছে। এটি কোনোভাবেই একটি নিরপেক্ষ অডিটরের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। বরং এইরূপ আচরণ পুরো অডিট প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এইরূপ অযৌক্তিক কার্যকলাপ আমাদের আইনানুগ অধিকার রক্ষার্থে গঠনমূলক সালিসি প্রক্রিয়া অবলম্বনের দাবিকেই সমর্থন করে।’