প্রদর্শনী কেন্দ্রের বড় বাধা 'দূরত্ব'

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। ২৪ জুলাই পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। ২৪ জুলাই পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর রোডে। ছবি: প্রথম আলো

বিশাল স্থাপনা ২০ একর জমির ওপর। দৃষ্টিনন্দন ঢেউখেলানো ছাদের নিচে ২ লাখ ৬৯ হাজার বর্গফুটের দুটি পৃথক প্রদর্শনী হলে থাকবে ৮০০ স্টলের ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রদর্শনীস্থলে থাকবে সম্মেলনকক্ষ, খাবারের জন্য বিশাল কক্ষ ও বাচ্চাদের খেলার জায়গা।

রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামের এই আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো নির্মাণকাজ শেষ হবে। তারপরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে প্রদর্শনী কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলের এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। দ্রুত এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেল নির্মাণ করবে সরকার। সেই কাজ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তা ছাড়া আশপাশে আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ভেতরে স্টলের সংখ্যাও সীমিত। ফলে আগামী বছর নির্মাণকাজ শেষ হলেও কেবল দূরত্বের কারণে শিগগিরই আধুনিক এই প্রদর্শনী কেন্দ্র ব্যবহৃত হবে কি না, সে বিষয়ে শঙ্কা আছে।

শঙ্কার বিষয়টি স্বীকার করে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এই প্রদর্শনী কেন্দ্র একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রদর্শনী কেন্দ্রের জন্য বাড়তি ছয় একর জমি কেনা হয়েছে। সেখানে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তা ছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ হয়ে যাওয়ার কথা। তার মানে ২০২৭ সালের মধ্যে প্রদর্শনী কেন্দ্রটি পরিপূর্ণতা পাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র করার জন্য ২০০৯ সালে প্রাথমিকভাবে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের ৩৯ একর খালি জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে সেখানে জায়গা না পাওয়ায় প্রকল্পটি পূর্বাচল উপশহরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০ একর জমির ওপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে চীন সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত খরচ হবে ৫০০ কোটি টাকা। আর জমি বাবদ সরকার দিয়েছে ১৭০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণকাজ করছে চীনা কোম্পানি।

>

পূর্বাচলে এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র আগামী জুনের আগে ব্যবহারের উপযোগী হলেও দূরত্বের কারণে এর ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

২৩ জুলাই পূর্বাচলে সরেজমিনে দেখা যায়, মূল ফটক থেকে বেশ খানিকটা জায়গা ছেড়ে মূল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেই খালি জায়গায় নির্মাণসামগ্রী রাখা হলেও পরে সেখানে ফোয়ারা তৈরি করা হবে। প্রদর্শনী কেন্দ্রের মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ। ভেতরের সাজসজ্জা ও কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং বাইরের দেয়ালে টাইলস লাগানোর কাজ চলছে। পাশেই দোতলা কার পার্কিংয়ের জায়গা ইতিমধ্যে প্রস্তুত। সেখানে ৫০০ গাড়ি রাখা যাবে।

মূল প্রদর্শনী কেন্দ্রের ফটক দিয়ে ঢুকলেই বিশাল খোলা জায়গা। দোতলায় থাকবে সম্মেলনকেন্দ্র, শিশুদের খেলার ও নামাজের জায়গা। নিচতলায় নিবন্ধন ও খাওয়ার জায়গা থাকবে। দুই পাশে একতলাবিশিষ্ট দুটি পৃথক হল করা হয়েছে। সেখানে ৪০০ করে মোট ৮০০ স্থায়ী বুথ হবে। প্রতিটি বুথের আকার হবে ৯ বর্গমিটার।

প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মামুনূর রশীদ বলেন, প্রদর্শনী কেন্দ্রের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ৫৭৬ ঘনমিটারের দুটি ট্যাংক তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া ব্যবহৃত পানি পুনরায় ব্যবহারের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য সাবস্টেশন ও জেনারেটর থাকবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শেরেবাংলা নগরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে জায়গার স্বল্পতার কারণে পূর্বাচলের প্রদর্শনী কেন্দ্রে আপাতত বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা কঠিন। সে জন্য নতুন করে ৬ একর জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। আরও ১২ একর বরাদ্দ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে সারা বছর সোর্সিং ও পণ্য প্রদর্শনী হবে। সে জন্য পাঁচ তারকা হোটেল, আরও একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র, ভূগর্ভস্থ পার্কিং ইত্যাদি করা হবে। এসব স্থাপনার জন্য ইতিমধ্যে বাড়তি ছয় একর জমি পেয়েছি। শিগগিরই আরও ১২ একর পাব।’ প্রদর্শনী কেন্দ্র চালু ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে চালু হতে পারে। ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে হয়ে যাবে। এ কাজে চীনা প্রতিষ্ঠান আমাদের এক বছর সহায়তা করবে।’

পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় ডেনিম এক্সপো আয়োজন করছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন। এতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য শহরতলির সঙ্গে প্রদর্শনী কেন্দ্রের ভালো যোগাযোগব্যবস্থা, প্রদর্শকদের থাকার জন্য আশপাশে বিভিন্ন মানের হোটেল, প্রদর্শনী কেন্দ্রে ছোট ছোট সভাকক্ষ ও উন্নত মানের ক্যাটারিং ইত্যাদি সুবিধা থাকতে হয়।

শুরুতে হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে ডেনিম এক্সপো হলেও বর্তমানে কয়েক বছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত হচ্ছে। পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার চালু হলে সেখানে ডেনিম এক্সপো আয়োজন করবেন কি না জানতে চাইলে মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আপাতত করব না। কারণ সেখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তা ছাড়া এত দূরে কে যাবে?’