ফের ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুবিধা নিয়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশ বিগত কয়েক বছরে বিত্তশালী হয়ে উঠেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, এসব দেশের সুবিধা প্রত্যাহার করা হোক। তা না হলে প্রকৃত উন্নয়নশীল দেশগুলো বঞ্চিত হবে। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, উন্নয়নশীল দেশের সংজ্ঞা স্পষ্ট করুক ডব্লিউটিও। অনেকের মতে, ভারত ও চীনের মতো দেশই ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য।

পুরো বিষয়টি নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশনা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, উন্নত অর্থনীতি ডব্লিউটিওর বিধির ফাঁক যারা কাজে লাগাচ্ছে, তাদের সব সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে।

এ নিয়ে যথারীতি টুইট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের ধনীতম দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশ দাবি করে বিশেষ সুবিধা পেলে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম ভঙ্গ করলে এই সংস্থারই অস্তিত্ব থাকে না। এটি আর হবে না। আমাদের বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশনা দিয়েছি, বাণিজ্যব্যবস্থার সঙ্গে প্রতারণা করে এরা যেন অন্যায় সুবিধা নিতে না পারে।’ শুক্রবার প্রেসিডেন্টের এক মেমোতে তিনি বাণিজ্য প্রতিনিধিকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

বলা বাহুল্য, এই নির্দেশনায় ট্রাম্প মূলত চীনকে উদ্দেশ্য করেই এই হুংকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীনসহ বিশ্বের ধনীতম ১০টি দেশের মধ্যে সাতটি দেশ মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে নিজেদের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে রেখে দিয়েছে। বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রাম্প নির্দেশনা দিয়েছেন যে এই দেশগুলো যদি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডির) সদস্যপদের আবেদন করে, তাহলে যেন তাদের সমর্থন দেওয়া না হয়।

নির্দেশনায় যেসব দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে ভারতের নাম নেই। কিন্তু অনেকেই বলছেন, সেখানে এমন কিছু সুবিধার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত পেয়ে থাকে। বস্তুত, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতকে বেশ কিছু পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানির সুবিধা দিত যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সেই বিশেষ সুবিধা বা জিএসপি প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিউটিওর নতুন বিধি মানার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়, তুলনামূলকভাবে বেশি আমদানি শুল্ক, সালিসিতে কিছু ছাড় পেয়ে থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলো।

ব্যাপারটা হলো, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঘাটতি কমাতে চাচ্ছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঠিক এখানেই আপত্তি করেছে। ২৩ জুলাই প্রকাশিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে তারা বলেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে চলমান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে হবে। ঘাটতি কমাতে কোনোভাবেই শুল্ক আরোপ করা যাবে না। সমস্যা বা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করতে হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালকের অর্ধবার্ষিক (অক্টোবর, ২০১৮-মে, ২০১৯) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই সময়ে ৩৩৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বাণিজ্যে নানা রকম বাধা আরোপ করা হয়েছে। এর আগের প্রতিবেদনের মেয়াদে আরোপ করা হয়েছিল ৫৮৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে, যা লিপিবদ্ধ ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

বাণিজ্য ব্যাহত হলে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এসব পরিহার করে দেশগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে আসা দরকার বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তা না হলে আবারও বৈশ্বিক মন্দা হতে পারে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।