অনলাইনে পশু কেনায় ঝামেলা কম, সতর্কতা বেশি

ভিড় ঠেলে দরদাম করে হাট থেকে পশু কিনে আনার ঝামেলা থেকে যাঁরা দূরে থাকতে চান, তাঁদের জন্য বড় স্বস্তি হয়ে এসেছে অনলাইন পশুর হাট। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকে পছন্দমতো গরু কেনার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। শুধু গরু কেনা নয়, কোরবানি দিয়ে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে এসব প্রতিষ্ঠান। আবার পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করার জন্য পেশাদার কসাইয়ের খোঁজও দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

কোরবানির পশু বিক্রির প্রচার-প্রচারণায় এখনই সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন হাট। ফেসবুকেও বিভিন্ন গ্রুপ পেজ খুলে চালাচ্ছে বিক্রি ও প্রচারের কাজ। তবে অনলাইনে পশু কেনার সময়ও সতর্ক না থাকলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অনলাইন হাট পরিচালনায় যুক্ত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কোরবানি ঈদে প্রায় ছয় হাজার পশু বিক্রি হয়েছে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তবে বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যা এবং দাম সম্পর্কে কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

অনলাইনের পরিসরে পরিচিত নাম বেঙ্গল মিট। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনলাইন হাট চালু করেছে কোরবানি ও গরু সরবরাহের সেবা নিয়ে। তাদের সাইটে বিভিন্ন জাত ও আকারের গরুর ছবিসহ দাম উল্লেখ করা আছে। ক্রেতারা qurbani.bengalmeat.com ঠিকানায় কোরবানির পশুর অর্ডার দিতে পারবেন। বিক্রির পর পশু ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, পশুর সহজলভ্যতার ওপর ৮ আগস্ট পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া হবে। তাঁদের সাইটে দেড় হাজার গরু বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। এর মধ্যেই অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর যে রকম সাড়া পাচ্ছি, তাতে গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি গরু বিক্রি হবে। মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ সেবাও রয়েছে তাঁদের। তবে এটি শুধু রাজধানীর জন্য।’

অনলাইন বেচাকেনার পোর্টাল বিক্রয় ডটকমে (www.bikroy.com) পশুর বেচাকেনা এখন জমজমাট। এখানে মিলছে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু থেকে দেশি ষাঁড় ও বকনা গরু। দাম ৪৫ হাজার থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ছাগল পাওয়া যাচ্ছে ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। 

গত কয়েক বছরে বিক্রয় ডটকমে পোস্ট করা বিজ্ঞাপন থেকে বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যার একটা হিসাব দেন পোর্টালের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ঈশিতা শারমিন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে এই পোর্টাল থেকে পশু বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫৪৪টি। পরের বছর তা ২ হাজার ২৯৩টিতে পৌঁছায়। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ছুঁয়েছে। 

ঈশিতা শারমিন আরও বলেন, ‘গত বছর বিক্রয় ডটকমে মেম্বারশিপ সার্ভিস নিবন্ধনের মাধ্যমে আমরা ৭০ জন খামারির পশু বিক্রি করেছি। এ বছর খামারির সংখ্যা এক শ ছাড়াবে।’

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের গৃহে পালিত গরু সংগ্রহ করে তা অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে আরেকটি ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ (https://www.daraz.com.bd/wow/i/bd/eid-big-sale/gorur-haat)। এখানে মিলবে ৪২ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরু। অনলাইনে ছবি দেখে অর্ডার নেওয়া হবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আছে ফ্রি ডেলিভারির ব্যবস্থা ও বিশেষ ছাড়।

দারাজের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সায়ন্তনী ত্বিষা বলছেন, এর মধ্যেই তাঁদের সাইটে তোলা ১৬টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

এসবের বাইরে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম আজকের ডিল ডটকমে (www.ajkerdeal.com) মাংস মাপার ডিজিটাল যন্ত্র, ছুরি, চাপাতিসহ কোরবানি–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘কাটাকুটির মেলা’। 

ফেসবুক জমজমাট

কোরবানি ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন অনলাইন ক্ল্যাসিফায়েড সাইট ও ই-কমার্স গ্রুপের পাশাপাশি গবাদিপশু বিক্রির কাজে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানা ফেসবুক গ্রুপ। এর মধ্যে জনপ্রিয় একটা গ্রুপ হচ্ছে ‘গরু ছাগলের বিরাট হাট’। এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। আছে বিডি ক্যাটেল শো নামের আরেকটি গ্রুপ। 

চার বছর আগে পেশাদার কসাই দিয়ে কোরবানির পশুর মাংস তৈরির জন্য ‘Butcher Shop কসাই সাপ্লাই’ নামের একটা ফেসবুক পেজ খুলেছিলেন সোলায়মান হোসেন নামের এক অটোমোবাইল ব্যবসায়ী। এ মুহূর্তে গ্রুপটির সদস্য দেড় শর বেশি পেশাদার কসাই। সোলায়মান জানান, গত বছর তাঁর গ্রুপের সদস্যরা রাজধানী ৯৭টি জায়গায় তিন শর বেশি পশু জবাই করেছেন। এ বছর সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তাঁর ধারণা। তিনি বলেন, মাংস তৈরির জন্য বুকিং দেওয়া যাবে ৫ আগস্ট থেকে। 

অনলাইনে পশু কেনার ক্ষেত্রে পরামর্শ

অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিক্রয় ডটকমের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ঈশিতা শারমিন। তিনি বলছেন, অনলাইনে পশু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম কাজ হবে পশুটি ভালোভাবে দেখা। এ জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন কোণের যত বেশি সম্ভব ছবি চেয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে ভিডিও কল করা যেতে পারে। যদি কোনো বিক্রেতা তাঁর গরু ভালোভাবে দেখাতে ব্যর্থ হন, তাহলে তা না কেনাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, অনলাইনে পছন্দের পশু বাছাইয়ের পর সশরীরে গিয়ে যাচাই করে দেখা।