দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি

>সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে আমেরিকান এক্সপ্রেস সেবা। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ব্যাংকটির পরিকল্পনা, সমস্যা ও ব্যবসার হালচাল নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন
মাসরুর আরেফিন, এমডি, সিটি ব্যাংক
মাসরুর আরেফিন, এমডি, সিটি ব্যাংক

প্রথম আলো: সিটি ব্যাংক তো ক্রেডিট কার্ড সেবায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেমন চলছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা?
মাসরুর আরেফিন:বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। কারণ, যেসব ব্যাংক কার্ডের ব্যবসা করছে, তারা বড় বড় বিভাগীয় শহর থেকে বের হতে চাইছে না। সিটি ব্যাংক চেষ্টা করছে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার। আমরা আমেরিকান এক্সপ্রেসের মাধ্যমে বেশ কিছু শহরে গেছি, কার্ড সেবা দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। ১০-১২টি শহরে আমরা কার্ড সেবা পৌঁছাতে পেরেছি। ৪ লাখ ২০ হাজার ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। যদিও এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড বাজারের এক-তৃতীয়াংশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তারপরও আমরা থেমে থাকতে চাই না। কেন লালমনিরহাট, বগুড়ার মানুষ ক্রেডিট কার্ড সেবা পাবে না। ক্রেডিট কার্ড সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি।

প্রথম আলো: ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধি কেন কমে গেল?
মাসরুর আরেফিন: কয়েকটি শহরের মধ্যে কার্ড সেবা সীমাবদ্ধ থাকায় এমন হয়েছে। আর কার্ড ব্যবহারে যে সুবিধা রয়েছে, তা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই দিনাজপুর বা কুষ্টিয়ার কেউ কেন ক্রেডিট কার্ড নেবে। এসব এলাকায় তো কার্ড ব্যবহারের জন্য অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়নি। পয়েন্ট অব সেলস মেশিনও নেই। দেশের প্রতিটি জেলা শহরে ক্রেডিট কার্ড সেবা পৌঁছে দেওয়ার মতো বাজার আছে। দিনাজপুরে মতো জেলায় শতাধিক দোকান-রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে, যেখানে ক্রেডিট কার্ড চলবে। ব্যাংকগুলোকে এখন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, সেবা পৌঁছাতে হবে।

প্রথম আলো: সারা দেশেই উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সারা দেশে কার্ড সেবা ছড়িয়ে দিতে সিটি ব্যাংক কী করছে?

মাসরুর আরেফিন:আমরা এ জন্য ইউনিয়ন পের সঙ্গে চুক্তি করেছি। ৩০টি জেলার নতুন বাজার যাচাইয়ে এখন জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে তারা অর্ধেক খরচ দিচ্ছে। এরপর আরও ৩০টি জেলাতেও জরিপ হবে। এসব এলাকায় কত দোকান আছে ও কত মানুষ কার্ড নিতে পারে, আমরা তা যাচাই করছি। এরপরই ইউনিয়ন পে প্লাস্টিক কার্ড চালু করা হবে।

প্রথম আলো: ক্রেডিট কার্ডের সেবা মাশুল অনেক বেশি। এ কারণে অনেকেই ক্রেডিট কার্ডকে বোঝা মনে করছে? আপনি কী মনে করেন?

মাসরুর আরেফিন: ক্রেডিট কার্ড হলো প্লাস্টিকের একটি ঋণবই। এর মাধ্যমে যখন-তখন চাইলেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা যাচ্ছে। নিয়ম মেনে ব্যবহার করে ঋণ শোধ করলে ক্রেডিট কার্ডের জন্য বাড়তি কোনো সুদও দিতে হয় না। আপনি-আমি হঠাৎ খেতে যাব, নগদ টাকা সঙ্গে না–ও থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড সমাধান হতে পারে। কার্ডে যে সুবিধা আছে, তা কোনো ব্যাংকিং সেবায় নেই। এ কারণে সারা পৃথিবীতে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় ব্যাংক সেবা।

প্রথম আলো: ক্রেডিট কার্ড সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে আরও নতুন কোনো উদ্যোগ কি আছে?

মাসরুর আরেফিন: আমরা চাইছি, মোবাইল ফোনের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডকে যুক্ত করে ছোট আকারের ঋণ দিতে। এ জন্য নীতি সহায়তা প্রয়োজন। মোবাইল কোম্পানি, বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের লেনদেন রেকর্ড ও কেওয়াইসিকে কাজে লাগিয়ে সিটি ব্যাংক ঋণ সেবা ছড়িয়ে দিতে চায়। এটাই মাইক্রো বা ন্যানো ঋণ নামে পরিচিত। আলী বাবা-ইউ পে চীনে এভাবে ঋণ সেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। আফ্রিকাজুড়ে এমন সেবা আছে। যারা মোবাইল ফোন চালায়, তাদের রেকর্ডকে ব্যবহার করে ঋণ সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে।