কার্ড দিয়ে গরু কেনা

বাজার সদাই করতে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার প্রায় এক যুগ ধরে জনপ্রিয়। কোরবানির পশু কিনতে কার্ডের ব্যবহার হালের বাজারে শুধু নতুনই নয় অভিনবও। কিন্তু এই কাজটিই বেশ সাফল্যের সঙ্গে করছে ঢাকার শহরতলির বেশ কিছু গরুর খামার। 

নগরীর বসিলায় অবস্থিত একাধিক গরুর খামারে রয়েছে কার্ডের মাধ্যমে গরু কেনার ব্যবস্থা। হতে পারে সেটা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। কোরবানির পশু পছন্দ করে দামাদামি করে একটা দাম ঠিক করে নিলেই হয়। এরপর অনায়াসে গরু কিনে ফেলা যায় কার্ড পাঞ্চ করে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল কার্ডে গরু কেনার এই দৃশ্য। মোহাম্মদপুর থেকে বসিলার দিকে আগালেই দয়াল হাউজিং-এর ভেতরে ৪০ ফিট খাল। এ নামেই সবাই চিনে সবাই এলাকাটিকে। যদিও খাল শুকিয়ে নালা এই ভরা বর্ষাতেও। খাল ধরে না চিনলেও, খালের পাড়ে মেঘডুবি এগ্রো নামটা বেশ পরিচিত। এখানেই গরু কিনতে পাওয়া যায় কার্ডে।

শুধু কার্ডে কেনার ব্যবস্থা নয়, গড়পড়তা ভীষণ আধুনিক ও গোছানো একটা ফার্ম মেঘডুবি। আছে নিজেদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ। এগুলোর মাধ্যমেই ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। তাদের ফার্ম আছে মোট ১৪টি যার চারটি ঢাকায়। মাত্র পাঁচ বছর ধরে চলা এই ব্যবসা বেশ গুছিয়ে উঠেছেন মালিক মোহাম্মদ আলি শাহীন।

মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি খামারে গরু কিনে কার্ড দিয়ে দাম পরিশোধ করছেন একজন ক্রেতা। ঢাকা, ০৫ আগস্ট। ছবি: আশরাফুল আলম
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি খামারে গরু কিনে কার্ড দিয়ে দাম পরিশোধ করছেন একজন ক্রেতা। ঢাকা, ০৫ আগস্ট। ছবি: আশরাফুল আলম

শাহীনের সঙ্গে কথা হয় মেঘডুবি এগ্রো-৪ এ, এটাই শাহীনের গরু বিক্রয়কেন্দ্র, বাকি ১২ টিতে পালন করা হয় গরু আর মেঘডুবি-১ থেকে সেই গরুকে পৌঁছে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

ফার্মের ভেতরে চারটি বৃত্তাকার পশু বেঁধে রাখার জায়গায় দুই স্তরে রাখা হয়েছে গরুগুলোকে। ভেতরের বৃত্তে তুলনামূলক ছোট গরুগুলো আর বাইরের দিকে বড় পশু, সবগুলো পশু ওপরে স্প্রেয়ার দেওয়া যেন গরমেও আর্দ্র আর শীতল থাকে পশুগুলো। থরে থরে সাজানো ফ্রিজিয়ান, সিন্ধি, হরিয়ানা, মীর কদিম এমনকি থাইল্যান্ড থেকে আসা সাদা মহিষও।

ফার্মের এক পাশে একটা ছোট গ্যালারি তার সামনে স্টেজ। যদি কেউ পরিবার ধরে আসে গরু কিনতে তাহলে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। গ্যালারিতে সবাই মিলে বসবেন, আর একে একে গরু দেখানো হবে তাদের। এরপর যেটা পছন্দ হবে সেটাই তারা কিনে নেবেন, বলেন ফার্মের ম্যানেজার তারেক।

খামারে যন্ত্রের মাধ্যমে গরু ওজন করা হচ্ছে। বসিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।  ০৫ আগস্ট। ছবি: আশরাফুল আলম
খামারে যন্ত্রের মাধ্যমে গরু ওজন করা হচ্ছে। বসিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ০৫ আগস্ট। ছবি: আশরাফুল আলম

কথা হতে হতেই ফার্মে এসে জড়ো হন একাধিক ক্রেতা। তারা কেউ ফার্মের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত কেউ একেবারেই ফেসবুক বা ওয়েবসাইটের পরিচয়ে এসেছে। তাদের একজন নজরুল এসেছেন বংশাল থেকে, গরু দেখা হয়েছে অনলাইনেই। এখন শুধু চোখে পরখ করে কেনার পালা। দেখে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে একটি সিন্ধি গরু কিনলেন তিনি। গরুর ওজন মাপা হলো সাড়ে ছয় শ কেজি।

গরু কিনে নজরুল জানালেন, এভাবে গরু কিনে বেশ সন্তুষ্ট আমি। হাটের ভিড়ভাট্টা গরম নেই। কার্ডেই টাকা পরিশোধ করতে পারলাম ফলে টাকাও নিরাপদ থাকল।

ফার্মের কর্ণধার শাহীন বলেন, আমাদের আড়াই হাজার গরু, তবে এই আড়াই হাজার গরুকে ঘিরে ক্রেতা প্রায় ২৫ হাজার। সবাই গরু না কিনলেও একে অপরকে জানান। এভাবেই ওয়েবসাইট আর কার্ডের মাধ্যমে গরু বিক্রির বিষয়টি জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন মোট বিক্রির মাত্র ১০ শতাংশ কার্ডের মাধ্যমে হচ্ছে। তবে যেভাবে ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন আশা করি আগামী কোরবানি পর্যন্ত তা ৫০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।