প্রিন্স, বস, বাহাদুরদের হাটে

২২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো হচ্ছে পাগলুর।   ছবি: প্রথম আলো
২২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো হচ্ছে পাগলুর। ছবি: প্রথম আলো

শাহজাদা, প্রিন্স, বস, খান বাহাদুর, বীর বাহাদুর, লাল বাহাদুর, কালাচাঁদ কিংবা সিনবাদ—এসব কোনো ব্যক্তির নাম, বংশপদবি বা পৌরাণিক কাহিনির চরিত্র ভেবে ভুল করবেন না। শেষ মুহূর্তে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘নামওয়ালা’ গরু। সাধারণ গরু থেকে ‘অভিজাত’ হয়ে ওঠার কারণ দাম। কোনোটিরই দাম ১০ লাখ টাকার নিচে নয়।

গায়ের রং, গঠন, ওজন আর দাম—গরু কেনার আগে ক্রেতারা সাধারণত এই চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রাখেন। গাবতলী হাটের সবচেয়ে দামি গরুর নাম ‘প্রিন্স’। এটি কুমিল্লা থেকে নিয়ে এসেছেন খামারি নাজমুল হোসেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, প্রিন্সের বয়স পাঁচ বছর। দেখতে গাঢ় কালো রঙের এই গরুর ওজন ৫০ মণ। তিন দিন আগে হাটে এলেও গরুটি এখনো বিক্রি করতে পারেননি। এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। তবে ৩০ লাখ টাকার কমে প্রিন্সকে ছাড়তে মন সায় দিচ্ছে না তাঁর।

কুমিল্লার এই খামারি ‘আলিশান’ নামের সাদা রঙের আরেকটি গরু হাটে নিয়ে এসেছেন। এর ওজন ৪০ মণ। এই গরুর দাম চাইছেন ২৬ লাখ টাকা।

বীর বাহাদুরের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৪ লাখ টাকা। ছবি: প্রথম আলো
বীর বাহাদুরের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৪ লাখ টাকা। ছবি: প্রথম আলো

গাবতলী হাটে ‘খান বাহাদুর’ নামের একটি গরু নিয়ে রাজবাড়ীর পাংশা থেকে এসেছেন খামারি ওয়ালী খান। গরুটি দেখতে কালো কুচকুচে, বয়স চার বছর। ওয়ালী খান জানান, এলাকাতেই গরুটির দাম সাড়ে ৬ লাখ টাকা বলেছেন লোকজন। এত কম দামে বেচবেন না বলে গাবতলীতে এসেছেন তিনি। ২০ লাখ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি।

ব্যাপারী মোহাম্মদ মানিক নিয়ে এসেছেন দুটি গরু নিয়ে। একটির রং লাল আরেকটির কালো। এ কারণে গরু দুটির নাম রেখেছেন লালু-কালু। লালুর দাম ১৫ লাখ আর কালুর ১২ লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন তিনি।

শেরপুরের নকলার জোবাইদুল ইসলাম হাটে নিয়ে এসেছেন ‘লাল বাহাদুর’। দাম ১৫ লাখ। জোবাইদুলের দাবি, হাটে একমাত্র বড় আকৃতির দেশি জাতের ষাঁড় ‘লাল বাহাদুর’। স্বাভাবিক খাবার দিয়েই বড় করা হয়েছে গরুটিকে।

>
রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে উঠেছে উচ্চমূল্যের গরু। বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুর নামও দেওয়া হয়েছে আকর্ষণীয়। গতকাল গাবতলী হাটে।  ছবি: আশরাফুল আলম
রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে উঠেছে উচ্চমূল্যের গরু। বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুর নামও দেওয়া হয়েছে আকর্ষণীয়। গতকাল গাবতলী হাটে। ছবি: আশরাফুল আলম


কোরবানির পশুর হাট
১০ লাখ টাকার বেশি দাম হাঁকানো হচ্ছে এমন গরু শুধু গাবতলী হাটেই রয়েছে অন্তত ১০০ টি

গাবতলীর হাটে কিশোরগঞ্জের অমিত হাসান তাঁর ‘কালাচানের’ জন্য ১০ লাখ, নেত্রকোনার আলাল মিয়া ‘শাহজাদার’ জন্য ২০ লাখ, মানিকগঞ্জের বিল্লাল হোসেন তাঁর ‘সিনবাদের’ জন্য ২৪ লাখ, কিশোরগঞ্জের সালেহ উদ্দীন তাঁর ‘বীর বাহাদুরের’ জন্য দাম হাঁকাচ্ছেন ২৪ লাখ টাকা।

গরু ব্যবসায়ীরা জানান, গাবতলীর হাটে ১০ লাখ টাকার ওপর গরু রয়েছে প্রায় ১০০ টি। এর মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৪টি বিক্রি হয়েছে। তবে কোনোটিই ১০ লাখে বিক্রি হয়নি। সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি (প্রতিটি) হয় ওই চারটি গরু।

বাড্ডার আফতাবনগর হাটেও ১০ লাখ টাকা বা এর বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে এমন গরুর সংখ্যা ১৬ টি। প্রতিটির আলাদা নাম রয়েছে। কোনোটির নাম ব্ল্যাক ডায়মন্ড, কেউ রাজা, কেউবা বাদশাহ, কারও নাম শাহজাদা বা যুবরাজ। পাবনার চুনু মিয়া ‘শাহজাদার’ দাম হাঁকাচ্ছেন ২২ লাখ টাকা। শাহজাদা নামে ডাকলেই মাথা নেড়ে সাড়া দেয় লালচে রঙের গরুটি।

গরুর নাম লাল বাহাদুর। দেশি প্রজাতির ষাঁড়। দাম ১৫ লাখ টাকা।  ছবি: প্রথম আলো
গরুর নাম লাল বাহাদুর। দেশি প্রজাতির ষাঁড়। দাম ১৫ লাখ টাকা। ছবি: প্রথম আলো

ভাটারার সাঈদ নগর পশুর হাটে ‘বস’ নামের একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। যশোরের ব্যবসায়ী মো. আজমত আলীর দাবি, তাঁর ‘বসের’ ওজন ৫০ মণ।

উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের হাটে সবচেয়ে বেশি দামি গরু নিয়ে এসেছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার মো. আবুল কাশেম। তাঁর শাহিয়াল জাতের গরুটি দেখতে কালো। তাই নাম রেখেছেন কালাচাঁদ। এর ওজন প্রায় ৩৬ মণ, দাম চাওয়া হচ্ছে ১৪ লাখ টাকা।

আবুল কাশেম বলেন, গরুটিকে দিনে দুবার আখের গুড় দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়ান।

গরুর নাম ও দাম নিয়ে গাবতলী, আফতাবনগর, ভাটারা ও উত্তরা হাটের ইজারাদারদের মন্তব্য, নজর কাড়তেই এমন দাম চাইছেন অনেক ব্যবসায়ী। পরে এর অর্ধেকেরও কম দামে এসব গরু বিক্রি হয়।