চীনাদের জন্য পণ্য তৈরি করছে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড

সম্প্রতি চীনের সাংহাই শহরে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড গুচির একটি দোকান থেকে ৫০০ মার্কিন ডলারে একজোড়া জুতা কিনে ফেরার সময় জু ইউয়েই নামের এক তরুণীকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদক টম হ্যানকক জিজ্ঞাসা করেন, অর্থনীতির শ্লথগতি তাঁর ব্যয়ে প্রভাব ফেলছে কি না। উত্তরে ২৫ বছর বয়সী সেই তরুণী বলেন, ‘ওসব চুলোয় যাক, আমি কেনাকাটা থামাচ্ছি না।’

ব্যাপারটা হলো, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে ২০১৮ সালে চীনের প্রবৃদ্ধির হার ১৯৯০ সালের পর সবচেয়ে নিচে নেমে গেলেও চীনাদের বিলাসদ্রব্য কেনা থামেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী চীনাদের বিলাসদ্রব্য কেনার হার তো কমেনি, বরং বেড়েছে।

জু ইউয়েই আরও বলেন, ‘আপাতত বাড়ি বা গাড়ি কিনছি না, তবে পণ্য কেনায় আমি আরও বেশি বেশি ব্যয় করছি।’ এই তরুণী একটি কোম্পানির বিপণন বিভাগে কাজ করেন। তাঁর বেতন মাসে ২ হাজার ৯৮০ ডলার। ফলে বছরে গুচির জুতার মতো আরও অনেক বিলাসদ্রব্য কেনেন তিনি।

বাজারমূল্যের ভিত্তিতে চীনের ও বিশ্বের বৃহত্তম ডিস্টিলেশন কোম্পানি কেউইচৌ মৌতাইয়ের বেচাবিক্রি দেখে চীনাদের ব্যয়ের হাবভাব বোঝা যায়। এরা বলছে, বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের মুনাফা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দামও এ বছর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে বহুজাতিক পরামর্শক সংস্থা বেইনের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর যে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বিলাসদ্রব্য বিক্রি হয়, তার এক-তৃতীয়াংশই হয় চীনে। তবে তারা এ–ও বলছে, এ বছর চীনে বিলাসদ্রব্য ভোগের পরিমাণ বাড়বে ১৫ শতাংশ হারে, যদিও গত বছর তা ছিল ২০ শতাংশ।

চীনের নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বপ্রতিষ্ঠিত নারী ধনীর বসবাস এখন চীনে। বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসির শিল্প বিশ্লেষক এরওয়ান রামবুর্গ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, এই নতুন ধনী নারীরাই চীনের বিলাসদ্রব্যের বাজারের মূল ক্রেতা। তাঁর পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর চীনে বিলাসদ্রব্যের বাজার বাড়বে ১২ শতাংশ হারে, যা গত বছরের অর্ধেক।

চীনের সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বলতা ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত করলেও ধনীতম মানুষদের গায়ে তা আঁচড় ফেলতে পারেনি। চীনের ধনীদের সম্পদ আহরণের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেখানকার জনসংখ্যার শীর্ষ এক-পঞ্চমাংশের আয় গত বছর ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে বেড়েছে, যদিও মাঝারি সারির মানুষের আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে।

ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ এখন এশিয়ার হাতে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০৪০ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ৫০ শতাংশ জোগান দেবে এশিয়া এবং বৈশ্বিক ভোগের ৪০ শতাংশও হবে এই মহাদেশে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে বৈশ্বিক বিলাসদ্রব্যের ৫২ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এশিয়ার বাজারে। স্বাভাবিকভাবে এশিয়ার এই ভোগের বড় একটি অংশ হবে চীনে।

ঠিক এই প্রসঙ্গ তুলে ম্যাককিনসে বাণিজ্য বাধা আরোপের ব্যাপারে বড় অর্থনীতিগুলোকে সতর্ক করেছে। দ্য শর্টলিস্ট নামের প্রতিবেদনে তারা বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি মানে সেখানে চাহিদাও তৈরি হওয়া। ২০১৭ সালে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৪ লাখ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। ফলে যারা এখন বাণিজ্য বাধা আরোপ করছে, তারা বরং ঝুঁকির মুখে পড়বে।