চামড়ার দাম নেই: কেউ বলছে সিন্ডিকেট, কেউ বলছে 'অন্তরালের খেলা'

কোরবানি পশুর চামড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন। চৌমুহনী এলাকা, আগ্রাবাদ, ১২ আগস্ট। ছবি: জুয়েল শীল
কোরবানি পশুর চামড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন। চৌমুহনী এলাকা, আগ্রাবাদ, ১২ আগস্ট। ছবি: জুয়েল শীল

রাজধানীর আদাবর এলাকার বাসিন্দা রবিন খান। আজ গরুর চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে হোঁচট খেলেন তিনি। এক লাখ টাকায় কেনা একটা গরুর চামড়ার দাম এক ব্যবসায়ী বলছেন কিনা ৩০০ টাকা! পরে তিনি সেই চামড়া স্থানীয় এতিমখানায় দান করেছেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরও কয়েকজন।

এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একেবারেই কম বলা চলে। যাঁরা কোরবানি দিয়েছেন, তাঁরা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা চামড়া সংগ্রহ করবে আরও ১০ থেকে ১২ দিন পর। ওই সময় পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা যদি চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে সরকার–নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, আর্থিক সংকটে আড়তদারেরা চামড়া কিনতে পারছেন না। আবার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম একবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, চামড়ার দাম নিয়ে অন্তরালে কেউ কেউ নোংরা খেলা খেলে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় চামড়া কেনার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। চামড়া কেনা নিয়ে হানাহানির ঘটনাও ঘটতো। তবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের অবস্থা বেশ খারাপ। এবার মৌসুমি ব্যবসায়ী সেভাবে দেখাও যায়নি।

বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি পিস ছোট চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী অভিযোগ করলেন, আড়তদার ও ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার কমিয়ে দিয়েছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনাও তৈরি হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আড়তদার ও ট্যানারি প্রতিনিধিদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সন্ধ্যার পর লালবাগের পোস্তায় চামড়ার পাইকারি বাজারে ভিড় করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া আসছে সেখানে। শুরু হয়েছে বেচাকেনা। তবে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, সেখানেও ব্যাপক দরপতন হবে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী থেকে প্রতি বর্গফুট লবণছাড়া চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে হিসাবে ছোট আকারের প্রতি পিস চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিপু সুলতান বলেন, এ বছর চামড়াখাতে খুব খারাপ অবস্থা। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। অনেকেই টাকা পাননি। আমাদের প্রায় আড়াই শ আড়তদারের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জন চামড়া কিনতে পারছেন। টাকার অভাবে চামড়া কিনতে না পারার কারণে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার এখন দাম আছে তার চেয়েও দাম আরও কমে যেতে পারে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে টিপু সুলতান বলেন, কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে চামড়া কিনছেন। না বুঝে ব্যবসা করতে এসে আড়তদারদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চামড়া কেনা শুরু করব আরও কয়েক দিন পর। এখন দরপতনের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করার বিষয়টি আশ্চর্যের। আমার মনে হয় গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। পোস্তায় চামড়া করতে গিয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হন। আশঙ্কা আর আতঙ্কে লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করে দেন।’

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসান থেকে কীভাবে বের হতে পারেন এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এখন যদি তাঁরা পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে চামড়াগুলো সংরক্ষণ করেন, তাহলে আমাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দাম পাবেন। এখন হুজুগে পড়ে চামড়া যদি বিক্রি করে দেন, তাহলে আমাদের কী করার আছে।’

আরও পড়ুন: