কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে শিল্প হুমকিতে পড়বে: বিটিএ

কাঁচা চামড়া রপ্তানির সরকারি সিদ্ধান্তে শতভাগ দেশীয় চামড়াশিল্প হুমকির মুখে পড়বে। এ খাতে সাত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। সাভারের আধুনিক চামড়াশিল্প নগরী প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কা ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ)।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংগঠনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানায় সংগঠনটি। তারা বলছে, কাঁচামাল না পেলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে যাবে। দেখা দিতে পারে শ্রমিক অসন্তোষ। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিটিএ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিটিএর সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, ২০ আগস্ট থেকে ট্যানারি মালিকেরা চামড়া সংগ্রহ শুরু করবেন। সে সময় চামড়ার বাজার স্থিতিশীল থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিটিএ জড়িত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা কখনো কাঁচা চামড়া কিনি না। পাঁচ থেকে ছয় হাত বদল হয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া আসে। তাই কাঁচা চামড়ার দরপতনের সঙ্গে কোনোভাবেই বিটিএ জড়িত নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ইলিয়াসুর রহমান, উপদেষ্টা শামসুল ইসলাম প্রমুখ।

চামড়ার বাজারে ব্যাপক দরপতনের কথা বিবেচনা করে গতকাল সন্ধ্যায় কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বকসী জানান, চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়াশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

গত দুদিন কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার বাজারে ব্যাপক ধস নামে। লাখ টাকার গরুর চামড়া ৩০০ টাকাতেও বিক্রি হয়নি। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে রাস্তায় ফেলে চলে যান। কোথাও কোথাও চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার খবরও আসে। এ প্রসঙ্গে ট্যানারি মালিকেরা বলেন, আড়তদারেরা নিজেরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে তারাই লাভবান হবেন। আর আড়তদারদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকেরা গতবারের চামড়ার দাম পরিশোধ না করায় এবার বেশির ভাগ আড়তদার বা ব্যবসায়ী চামড়া কেনা থেকে বিরত থেকেছেন। ফলে, চামড়ার দাম কমে গেছে।

চামড়ার দরপতন নিয়ে গত সোমবার থেকেই সিন্ডিকেটের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি। সিন্ডিকেটের কারণে প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোরবানির পশুর চামড়ার অর্থ যাদের পাওয়ার কথা সেই দরিদ্র জনগোষ্ঠী, প্রান্তিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কম দামে চামড়া কিনছেন আড়তদারেরা।

এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় যেসব চামড়া আড়তদারেরা কিনেছেন, সেগুলো তাঁরা ট্যানারি মালিকদের কাছে বড় লাভে বিক্রি করবেন। প্রতিটি চামড়ার পেছনে একজনের খরচ হবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। আর আকারভেদে সরকার-নির্ধারিত দামে এসব চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি হবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। রপ্তানির অনুমতি পাওয়ায় ট্যানারি মালিকেরা এখন আর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কম দামে চামড়া পাবে না।

আরও পড়ুন:
চামড়ার দামে ধস, কার লাভ-কার ক্ষতি?
https://www.prothomalo.com/economy/article/1609249

চামড়ার দাম নেই: কেউ বলছে সিন্ডিকেট, কেউ বলছে ‘অন্তরালের খেলা’
https://www.prothomalo.com/economy/article/1609155

বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিলেন চামড়া
https://www.prothomalo.com/economy/article/1609235

ন্যায্য দাম না পেয়ে ৯০০ চামড়া মাটিচাপা
https://www.prothomalo.com/economy/article/1609245

৩০০ টাকার চামড়া ৫০ টাকাও বলছেন না আড়তদারেরা
https://www.prothomalo.com/economy/article/1609188