খেলাপিদের বিদেশযাত্রা বন্ধের দাবি

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি গ্রাহকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চায় ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন প্রমোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফআইপিএ)। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো, সরকারি আমানত পেতে বিশেষ কমিটি গঠন, করবহির্ভূত টাকা আদায়, বিদেশি সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়ার সুযোগসহ ছয় দফা দাবি তুলেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের এই সংগঠন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে লিখিতভাবে দাবিগুলো তুলে ধরেন এফআইপিএ ও আইআইডিএফসির চেয়ারম্যান মতিউল ইসলাম।

দেশে বর্তমানে স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়েছে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় অবসায়িত হচ্ছে পিপলস লিজিং। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের আমানত ছিল ৪৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। আর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমানত ও ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ১০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। ১০ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫টি।

লিখিত প্রস্তাবে মতিউল ইসলাম বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, এমনকি সুদও দিতে পারছে না। ফলে তাদের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ ও বেসরকারি আমানত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের সিদ্ধান্ত সংকট আরও বাড়িয়েছে। আমানতকারীরা এখন টাকা রাখতে ভয় পাচ্ছেন। ব্যাংকগুলোও অসম্মতি জানাচ্ছে।

এসব সমস্যা সমাধানে ছয়টি লিখিত প্রস্তাব দেয় এফআইপিএ। প্রথমটি হচ্ছে, সব ধরনের খেলাপি ঋণ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পুনঃ তফসিল করতে হবে। যারা ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণে আগ্রহী হবে না, তাদের ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। পুনঃ তফসিল যেসব ঋণ খেলাপি হবে, সেটাও চিহ্নিত হবে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ হিসেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ নভেম্বরের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এসব ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেবে। 

দ্বিতীয় প্রস্তাবে অর্থসংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় মেট্রোপলিটন কোর্টে ১০টি পৃথক বেঞ্চ ও অর্থঋণ আদালতের জন্য পাঁচ বিচারক চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তৃতীয় প্রস্তাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ চাওয়া হয়েছে।

চতুর্থ প্রস্তাবে তারা বলেছে, ইডকল সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা এককভাবে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে নমনীয় সুদহারে ঋণ পাচ্ছে। অথচ ইডকলের চেয়ে ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ পাচ্ছে না। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কোনো সংস্থা থেকে ৫০ কোটি ডলার সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়, যা বিনিয়োগ হবে শিল্প ও অবকাঠামো খাতে।

পঞ্চম প্রস্তাবে কালোটাকা সংগ্রহের সুযোগ চেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করে যে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা সংগ্রহ করতে চায় এসব প্রতিষ্ঠান। 

ষষ্ঠ প্রস্তাবে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংকের মতো কম সুদে সরকারি আমানত পাওয়ার সুযোগ চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে তা পাচ্ছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে এফআইপিএ চায়, সরকারি আমানত ৫ শতাংশ সুদে ২টি সরকারি ব্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত নেবে। গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিষয়টি দেখভাল করতে পারে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এসব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। আমরা চাই, বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়করে ছাড় দেওয়া হোক। তাহলে তহবিলসংকট অনেকটা কেটে যাবে।’