বাংলাদেশের রপ্তানি ভারতে বাড়লেও পাকিস্তানে কমেছে

সার্কভুক্ত দেশগুলোতে সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেপালে রপ্তানি কমেছে। বেড়েছে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী সাত দেশে বিদায়ী অর্থবছরে মোট ১৪০ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপে রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য অর্থাৎ ১ কোটি ডলারের কম।

ইপিবির তথ্য বলছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১০৪ কোটি ৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। সেই হিসাবে এক বছরে রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় বৃদ্ধির রপ্তানি বেড়েছে ৩ হাজার ১২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

পাকিস্তানসহ তিন দেশে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিশন এবার রপ্তানি লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। তাই মিশনগুলোকে নতুনভাবে চলতে হবে। শুধু কূটনীতি নয়, মিশনগুলোকে মাথায় রাখতে হবে বাণিজ্যিক কূটনীতিও। কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের এরই মধ্যে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বসবাস করে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে। সে হিসাবে এসব দেশে রপ্তানি আরও বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি উৎস। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আমদানি ব্যয়ের চিত্র এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করেনি। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হিসাবে দেখা যায়, ওই অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৬১৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

ভারতে রপ্তানি বেশি বেড়েছে

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সার্কভুক্ত সাত দেশে বাংলাদেশ যে প্রায় ১৪১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে শুধু এক ভারতেই রপ্তানি হয় ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের অর্থবছর ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

এক বছরে ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

তবে পরিমাণে কম হলেও প্রবৃদ্ধিতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের অবস্থান প্রথম। দেশটিতে আগেরবার রপ্তানি হয়েছিল ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য। আর বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। প্রবৃদ্ধি ৭২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কায় ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। রপ্তানি ৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার থেকে এক বছরে ৪৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর মালদ্বীপে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বেশি কমেছে পাকিস্তানে

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রপ্তানিতে বড় ধস নেমেছে পাকিস্তানে। যেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছিল ৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৫ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশটিতে এক বছরে রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

পাকিস্তানের মতো নেপালের চিত্রও প্রায় একই। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অথচ আগেরবার রপ্তানি হয়েছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য। এক বছরে রপ্তানি কমেছে ১৬ শতাংশ।

আফগানিস্তানে আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও গত অর্থবছরে তা ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে হয়েছে ৬২ লাখ ৬০ হাজার ডলার।