এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য ব্রাজিলের বাজার

বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল। ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পিপিপি) দিক থেকেও দেশটির অবস্থান বিশ্বে এখন অষ্টম, যেখানে ২১ কোটি মানুষের বসবাস। এই দেশে জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০০ সালে যেখানে ছিল ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে তা বেড়ে বর্তমানে ৯ হাজার ১৪০ কোটি ডলারে উঠেছে।

অথচ এ রকম একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যবধান ব্যাপক। যেমন বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্রাজিল থেকে আমদানি করেছে ১৪৪ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময়ে ব্রাজিলে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ব্রাজিলে বাংলাদেশ যা রপ্তানি করে, তার চেয়ে আট গুণের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করে। বিজিএমইএ এসব তথ্য দিয়ে ৮ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে। এতে উভয় দেশের বাণিজ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ব্রাজিল সফরে রয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হকসহ বিকেএমইএ, ওষুধ শিল্প সমিতি ও ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন এই দলে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি ১৯ আগস্ট ব্রাজিলের বাণিজ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থ উপমন্ত্রী, ব্রাজিল কটন অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রির (সিএনআই) সঙ্গে বৈঠক করেছে। ২০ আগস্ট ব্রাজিলের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন সাও পাওলো চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানায়।

>

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ব্রাজিল সফরে। ব্রাজিলকে দেশে বিনিয়োগ ও দেশি পোশাক কেনার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এদিকে প্রতিনিধিদলটি ব্রাজিলে যাওয়ার আগে এর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ শুল্কের কারণে দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মারকোসার সদস্যদেশগুলোতে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি এখন বন্ধ, পাট রপ্তানিও বন্ধের পথে। আবার তারা উচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ হওয়ায় পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এসব দেশে কোনো শুল্কমুক্ত বা কোটামুক্ত সুবিধা পায় না। দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক কোনো বাণিজ্য চুক্তিও নেই। তবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করে শুল্ক কমানো গেলে বা শূন্য করা গেলে ওই সব দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার অনেক বড় হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টিপু মুনশিকে ব্রাজিলের বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কহার তাঁরা কমাবেন। সে ক্ষেত্রে এ বছরের শেষ দিকে মারকোসারের যে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা, বাংলাদেশ যেন সেখানে এফটিএর প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে।

মারকোসার জোটের গুরুত্বপূর্ণ চার সদস্য হলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটে বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু ও সুরিনাম হচ্ছে সহযোগী সদস্য। তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য ব্রাজিলের বাজার ধরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিপূর্বে ট্যারিফ কমিশনকে দিয়ে মারকোসারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছে। ট্যারিফ কমিশন বলছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য বড় রপ্তানি গন্তব্যস্থল হতে পারে মারকোসারের গুরুত্বপূর্ণ চার দেশ। কারণ, দেশগুলোর গড় মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের বেশি। এফটিএ হলে উভয় পক্ষেরই বাণিজ্য বাড়বে, তবে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্রাজিলের বৈঠকগুলোতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যে ব্রাজিল ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে। এটি সহনীয় পর্যায়ে নামালে বা শুল্কমুক্ত করা হলে ব্রাজিলের মানুষই কম মূল্যে বিশ্বমানের তৈরি পোশাক কিনতে পারবেন। ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দিতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত।

এদিকে আগামী ৭-৮ নভেম্বর ব্রাজিলের সাও পাওলোতে বিজিএমইএর উদ্যোগে একটি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন টিপু মুনশি। মেলায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ ব্রাজিলে রপ্তানি সম্ভাবনাময় ওষুধ, পাট, সিরামিক, প্লাস্টিক ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন করা হবে।