যখন-তখন ব্যক্তিগত ঋণ

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বিশ্বাস রায়। চাকরির বয়স দুই বছরের কাছাকাছি। বাড়ি সংস্কারের জন্য পরিবারকে সহায়তা করতে চান, কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। সহকর্মীর পরামর্শে ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ (পারসোনাল লোন) নিয়ে পরিবারকে দেন। আর প্রথমবারের মতো পরিবারকে সহায়তা করতে পেরে খুশি বিশ্বাস রায়, সঙ্গে তাঁর বাবা ও মা। 

এমন সব ব্যক্তিগত ও সাংসারিক প্রয়োজনে আপনিও নিতে পারেন ব্যক্তিগত ঋণ। দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন ঋণ দিয়ে থাকে। এ জন্য আপনাকে হতে হবে চাকরিজীবী অথবা ব্যবসায়ী। আপনার নিয়মিত মাসিক আয় থাকতে হবে। সাধারণত বেতনের সর্বোচ্চ ১০ গুণ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। আর সুদের হার হবে আপনার পেশার ওপর নির্ভর করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গ্রাহকভেদে ১০ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। যেমন ব্যাংকারদের জন্য সুদহার একটু কম, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য একটু বেশি। এর চেয়ে বেশি সুদ নেয় বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। সঙ্গে রয়েছে ১-২ শতাংশ সেবা মাশুল। এ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। 

প্রাইম ব্যাংকের ভোক্তা ঋণ বিভাগের প্রধান এ এস এম মাহফুজ প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের সুদহার পেশার ওপর নির্ভর করে। তবে চাকরিজীবীরাই বেশি ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আসেন। জরুরি প্রয়োজনে এ ঋণটি বেশ কাজে দেয়। 

কী কী প্রয়োজনে আপনি ব্যক্তিগত ঋণ নিতে পারেন, তার একটা তালিকা দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে গৃহস্থালি সরঞ্জাম, টেলিভিশন, ল্যাপটপ, মুঠোফোন ও আসবাব কেনাকাটা, বাসার অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, অন্য কারও ঋণ পরিশোধ, ঘোরাঘুরির খরচ মেটানোসহ ব্যক্তিগত নানা খরচ। পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের প্রয়োজনেও আপনি এ ঋণ নিতে পারেন। 

ঋণ পেতে আপনাকে যা যা করতে হবে, তা দেখে নেওয়া যাক। প্রথমে কোনো শাখায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। সব ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে ঋণ অনুমোদন হয়। ব্যক্তিগত ঋণের সুদহার সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে আপনার ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ সনদ (ইটিআইএন), বেতনের সনদ, মাসিক পে স্লিপ। আর যে ব্যাংকের যে হিসাবে আপনার বেতন দেওয়া হয়, সেই হিসাবের ছয় মাসের লেনদেন বিবরণীও দিতে হবে। আপনার আবাসিক পরিচয় নিশ্চিত হতে দিতে হবে বাসার পরিষেবা বিলের কপি। ঋণের জন্য লাগবে একজন জামিনদার। তাঁরও পরিচয়পত্র, ছবি জমা দিতে হবে। এর সবই যাচাই করবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপনার পরিচয় নিশ্চিত হতে আবাসিক ঠিকানাতেও যাবে। তাই ঋণের আবেদনের সঙ্গে কোনো ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। আর ঋণের আবেদনের সময় নিশ্চিত হতে হবে সুদহার সময়ে সময়ে পরিবর্তন হবে নাকি নির্দিষ্ট। সময়ে সময়ে পরিবর্তন হলে বেড়ে যাবে কিস্তির পরিমাণ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ব্যক্তিগত ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশের মধ্যে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাংক এশিয়ায় সুদহার ১০ থেকে ১৩ শতাংশ, ব্র্যাক ও ঢাকা ব্যাংকে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ডাচ্​–বাংলা ও ইউসিবিএল সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ, ইস্টার্নে ১০ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ, এক্সিমে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ, আইএফআইসিতে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ, মার্কেন্টাইলে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্টে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকে ১১ থেকে ১৫ শতাংশ, প্রাইমে সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ, সিটি ব্যাংকে ১৩ শতাংশ।