এবার শুরু মুদ্রাযুদ্ধ

এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ এখন নতুন এক মোড় নিচ্ছে। শুরু হয়েছে মুদ্রার লড়াই। চলতি মাসের শুরুতে নতুন করে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে গত সপ্তাহেই চীন ডলারের বিপরীতে কমিয়ে দেয় নিজেদের মুদ্রা ইউয়ানের দর। ৫ আগস্ট ১ ডলার সমান করা হয় ৭ দশমিক শূন্য ৫ ইউয়ান, যা ২০০৮ সালের পর ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের সবচেয়ে বেশি অবমূল্যায়ন। এরপর এক টুইটে চীনের বিরুদ্ধে মুদ্রার অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেন ট্রাম্প। চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ বলেও আখ্যা দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নতুন এই যুদ্ধই নাড়া দিয়েছে মুদ্রা বাজারকে। অবশ্য চীন বলছে, বাণিজ্যযুদ্ধে মুদ্রাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। ইউয়ানের যে দরপতন ঘটেছে, তা বেইজিংয়ের ইচ্ছাকৃত নীতি নয়। 

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ব্যাংক অব আমেরিকার মেরিল লিঞ্চ গ্লোবাল রিসার্চ চীনা ইউয়ানের এই অবমূল্যায়নের তিনটি দৃশ্যপট বিশ্লেষণ করেছেন। 

প্রথমটি হলো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের আমদানি হচ্ছে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির এক-তৃতীয়াংশ। এর মানে হলো, যুক্তরাষ্ট্র যত পণ্যে শুল্ক আরোপ করছে, চীনের পক্ষে তত পণ্যে শুল্ক আরোপ সম্ভব হবে না। তাই চীনের জন্য ভালো অস্ত্র এখন মুদ্রার অবমূল্যায়ন। 

দ্বিতীয় দৃশ্যপট হলো, একটা টানা অচলাবস্থা—ইউয়ানকে অপরিবর্তিত রেখে দেওয়া। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে চীনা মুদ্রার দর একটি সীমার মধ্যে রাখা যেতে পারে। বেইজিং কেবল ওই সীমার মধ্যে একবার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করবে একবার বাড়াবে। 

তৃতীয় দৃশ্যপটে চীনের মুদ্রা একটি নির্দিষ্ট দর পর্যন্ত বাড়তে পারে। কারণ, প্রয়োজন হলেই ইউয়ান অবমূল্যায়ন করতে পারবে। 

এদিকে এই দৃশ্যপটকে নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। ১৯ আগস্ট এক টুইটে শক্তিশালী ডলার নিয়ে ট্রাম্প বলেন, মার্কিন অর্থনীতি মন্দার দিকে যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্থনীতি অবিশ্বাস্য রকমের ভালো আছে। তবে দুঃখজনক যে শক্তিশালী ডলারের কারণে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

আসলে অনেক দিন ধরেই সুদের হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বিরক্ত ট্রাম্প। ট্রাম্প চান সুদের হার কমাতে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড এখনই তা চাইছে না। রপ্তানি বাড়ানোর ওপর সব জোর দিতে চাইছেন ট্রাম্প। 

চলতি মাসে ইউয়ানের এই অবমূল্যায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের রুপি, সিঙ্গাপুরের ডলার, কোরীয় ওন, মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ও ইন্দোনেশিয়ার রুপি। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান অপরিবর্তিত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরু থেকে ১ ডলার সমান ৮৫ দশমিক ৪৫ ডলারে লেনদেন। পরে ২০ আগস্ট সাড়ে ৮৪ টাকা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পাউন্ডের দর কিছুটা ওঠানামা করছে।