ব্যাংকের সরাসরি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আপত্তি

জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর হয়ে এত দিন বিভিন্ন ব্যাংক কমিশন ছাড়াই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আসছিল। সেই সব ব্যাংকের কোনো কোনোটি এখন কমিশন নিয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। বদৌলতে লাভবান হচ্ছে তারা। কিন্তু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এটা চাইছে না। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর এভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং কমিশন নেওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে হবে। নইলে সরকারি হিসাবায়নে সমস্যা তো হবেই, বাড়বে সরকারের কমিশন ব্যয়ও।

এসব কথা জানিয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর গত ১৪ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠির সঙ্গে যেসব ব্যাংক নিজেরা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে, তাদের একটি তালিকাও পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। আর অনুলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিবকে। কিন্তু দেড় মাস পার হতে চললেও এর কোনো জবাব তৈরি হয়নি।

অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলাপ হয়েছে। আপাতত কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।

অর্থ বিভাগের আওতায় ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর আওতায়ও অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা চালু করা হয় গত ১ জুলাই।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় দেশের ৭৫টি সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর শাখা অফিস এবং ডাকঘরের মাধ্যমে। সঞ্চয় ব্যুরোগুলো অবশ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে কোনো একটি ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ধরনের ব্যাংকগুলোকে বলা হয় সঞ্চয় ব্যুরোর সঙ্গে সংযুক্ত বা লিঙ্কড ব্যাংক।

সঞ্চয় অধিদপ্তর চিঠিতে বলেছে, আইআরডির ১৯৮৬ সালের একটি আদেশ অনুযায়ী সঞ্চয় ব্যুরোর লেনদেন পরিচালিত হয়। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনো একটি শাখায় একটি করে চলতি হিসাব খোলে সঞ্চয় ব্যুরো। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে যে টাকা পাওয়া যায়, তা সরকারি হিসাবে পাঠানো হয় এই চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আবার কেউ সঞ্চয়পত্র ভাঙালে গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য সরকারি হিসাব থেকে টাকা আসে এই চলতি হিসাবেই।

>

সঞ্চয় অধিদপ্তর অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যাংকের সরাসরি বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে যে সঞ্চয় ব্যুরোর লিঙ্কড ব্যাংক নিজেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। ফলে একেকটি শাখার মাধ্যমে কী পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে, তার হিসাবায়নে স্পষ্টতার ঘাটতি থেকে যাবে। এ ছাড়া লিঙ্কড ব্যাংক নিজেরা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে, বিঘ্নিত হবে গ্রাহকসেবা।ব্যুরোর কাজে ব্যাংকগুলো আগ্রহ হারাবে।’

আরও বলা হয়েছে, সেবাটি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনে দূরত্ব ও জনগণের ঘনত্বও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। এতে জনগণ খুব কাছে থেকে সেবা নিতে পারবে এবং একই জায়গায় একাধিক বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের বাহুল্য দূর করাও সম্ভব হবে।

যেসব শাখা নিজেরাও বিক্রি করছে

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, কৃষি এবং বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক ও দি সিটি ব্যাংক হচ্ছে সঞ্চয় ব্যুরোগুলোর লিঙ্কড ব্যাংক। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১টি জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর ময়মনসিংহ বিভাগে ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪টি, খুলনা বিভাগে ১০টি, বরিশাল বিভাগে ৬টি, রংপুর বিভাগে ৮টি, সিলেট বিভাগে ৪টি ও রাজশাহী বিভাগে ৮টি জায়গা বা বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

সরাসরি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা ব্যাংক শাখাগুলোর সবই সোনালীর। এগুলো হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের মুন্সিগঞ্জ; টাঙ্গাইল; শরীয়তপুর; ঢাকার মতিঝিল স্থানীয় কার্যালয়, কাঁটাবন বাজমে কাদেরিয়া, কলেজ গেট, রোকেয়া সরণি ও উত্তরা মডেল টাউন; নারায়ণগঞ্জ করপোরেট; জামালপুর; চাঁদপুর; কুমিল্লার কান্দিরপাড়; চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ; পটুয়াখালীর নিউটাউন; পিরোজপুর, দিনাজপুর করপোরেট; কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর নওগাঁ; নাটোর; পাবনা প্রধান এবং সিরাজগঞ্জ প্রধান শাখা।

এ নিয়ে সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটা নির্দেশনা চাচ্ছি।’

সোনালী ব্যাংকের জামালপুর শাখার প্রধান মাহমুদুল হক গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ বিভাগ অনুমোদন করেছে বলেই আমরা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছি। গ্রাহকেরা বরং এখন কম সময়ে সেবা পাচ্ছেন এবং অল্প সময়ে সরকারি হিসাবে টাকাও জমা হয়ে যাচ্ছে।’ সঞ্চয় অধিদপ্তর কোন বিবেচনায় এর বিরোধিতা করছে, তা তাঁর বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন মাহমুদুল হক।