আসবে মাংস, যাবে পোশাক

বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিল নেবে আরও পোশাক। আর সেই দেশ থেকে বাংলাদেশ আনবে গরুর মাংস। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। এ জন্য অবশ্য দুই পক্ষকেই পরস্পরের পণ্যের ওপর শুল্ক হার কমাতে হবে।

দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মারকোসারভুক্ত চার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ৮ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে ধারণাপত্র পাঠিয়েছে, তাতে এ কথা উঠে এসেছে। 

ধারণাপত্রটি তৈরি করা হয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের মারকোসারভুক্ত অন্যতম চার দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে সফর উপলক্ষে। ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি গত সপ্তাহে ওই চার দেশ সফর করে দেশে ফিরেছে। দলটিতে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকও ছিলেন। সফরে পোশাক রপ্তানি ও মাংস আমদানি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে ওখান থেকে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

বিজিএমইএর ধারণাপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ বছরে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের মাংস আমদানির ব্যয় বেড়ে প্রায় চার গুণ হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ লাখ ২৮ হাজার ডলারের মাংস আমদানি করেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ডলার। এর মধ্যে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ শুধু ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ হাজার ৯০০ ডলারের মাংস আমদানি করেছিল। 

আর ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তথ্যে দেখা যায়, পাঁচ বছরে ১৪টি দেশ থেকে মাংস আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারত হচ্ছে সর্বোচ্চ আমদানির উৎস। তবে অস্ট্রেলিয়া থেকেই কেবল টানা পাঁচ বছর মাংস আনা হয়েছে। এ ছাড়া ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে গরুর মাংস আমদানি করে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ব্যবধান অনেক বড়। এটা কমাতে হবে। দেশটিতে যে পরিমাণ পোশাক আমরা রপ্তানি করছি, তা যথেষ্ট নয়। সাম্প্রতিক সফরের সময় ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি ও দেশটিতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনাটিও উঠেছিল। আমি মনে করি, এর বাস্তবতা রয়েছে ও কার্যকর করা সম্ভব।’

ব্রাজিলের মাংসের বাজার

বিজিএমইএর ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের মাংসের বাজার বছর বছর বড় হচ্ছে। যেমন ২০১৬ সালে দেশটি ৪৭৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের মাংস রপ্তানি করেছে। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সেটি আরও বেড়ে ৫৭২ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

চীন হচ্ছে ব্রাজিলের গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। দুই বছরের ব্যবধানে চীনের মাংস আমদানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে চীন আমদানি করেছিল ৭০ কোটি ২৭ লাখ ডলারের মাংস, যা ২০১৮ সালে প্রায় ১৪৯ কোটি ডলারে উঠেছে।

ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানিকারক শীর্ষ দশ দেশের বাকি নয়টি হচ্ছে মিসর, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), চিলি, হংকং, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও ফিলিপাইন। এর মধ্যে প্রথম চারটি হচ্ছে মুসলিমপ্রধান দেশ। 

অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব ও ব্রাজিল সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বিজিএমইএর প্রস্তাবটি কার্যকর হতে পারলে ভালোই হবে। ব্রাজিলের ব্যবসায়ীরাও আগ্রহ দেখিয়েছেন।

শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব ও প্রভাব 

গরুর মাংস আমদানিতে করভার ৩০ শতাংশের বেশি, যার মধ্যে আমদানি শুল্কই ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া অগ্রিম আয়কর ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর রয়েছে।

পাঁচ অর্থবছরের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে বিজিএমইএ প্রাক্কলন করেছে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে গরুর মাংস আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ডলার। এর মধ্যে শুল্ক বাদ দিলে এবং ২৫ শতাংশ ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হলে সরকারের আয় কমবে ২ লাখ ৮৬ হাজার ডলার।

একইভাবে মোট আমদানির ৫০ শতাংশ ব্রাজিল থেকে আনা হলে সরকারের ৫ লাখ ৭২ হাজার ডলার এবং ৭৫ শতাংশ আমদানি করা হলে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ডলার আয় কমবে।

পাশাপাশি বাংলাদেশি তৈরি পাশাকে ব্রাজিলে শুল্ক ছাড় পেলে কী হবে, সেটিও প্রাক্কলনও করেছে বিজিএমইএ। এতে দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্রাজিলে ১৬ কোটি ৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ব্রাজিল শতভাগ শুল্ক কমালে বাংলাদেশের বাঁচবে ৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার, ৫ শতাংশ শুল্ক হলে বাঁচবে ৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার। যদি বর্তমানের তুলনায় ৫ শতাংশ কমে ৩০ শতাংশ শুল্কও আরোপ হয়, তাতেও বাংলাদেশের সাশ্রয় হবে ৮০ লাখ ডলার।