বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব পড়ছে এশিয়ায়

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আবার মন্দার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্মসংস্থান আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আর্থিক বাজারে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার গত এক বছরের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এমন উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি করেছে। তবে এশিয়ার বড় অর্থনীতিগুলোর গতি মন্থর হলেও তাদের সামনে মন্দা তাৎক্ষণিক হুমকির সৃষ্টি করবে না। কিন্তু হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশগুলো বেশ ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান লুইস কুইস হংকং ও সিঙ্গাপুর—এসব দেশকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্যযুদ্ধের ‘নির্দোষ দর্শক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কুইস বলছেন, তারা ছোট ও মুক্ত অর্থনীতি, যাদের জন্য চীনের সঙ্গে বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুবাদে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালের পর সর্বনিম্ন।

চীন: দেশটি থেকে হাজার হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এতে চীনের অনেক কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, দেশটির রপ্তানির ২০ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ব্যবসায়ের জন্য আরও শঙ্কা হলো, এই বিরোধ কবে শেষ হবে, তেমন কোনো ইঙ্গিত নেই। এই অনিশ্চিত যুদ্ধ ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর প্রভাব ফেলছে, যা শুল্কের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে কর কমানো, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন।

জাপান: কুইস বলেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং বাণিজ্যযুদ্ধ জাপানের ব্যবসায়িক আস্থাকে আঘাত করছে। দেশটির রপ্তানি চাহিদার ওপর বিশেষ করে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে চলেছে।

জাপানি অর্থনীতিবিদ মারসেল থিয়েলিয়েন্ট বলেন, কর বাড়ানোর পর অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমবে। তখন প্রবৃদ্ধি আর এমন থাকবে না।

ভারত: এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমায় এবং বিনিয়োগে দুর্বলতার কারণে প্রবৃদ্ধি কমেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী,
ভারতে প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সামনে তা আরও কমার শঙ্কা আছে।

ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) চারবার সুদের হার কমিয়েছে। অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সফলতা আনবে কি না, তা নির্ভর করছে বাণিজ্যযুদ্ধের ওপর।

হংকং: চীনের প্রবৃদ্ধি কমায়, বাণিজ্যযুদ্ধ চলায় ও রাজনৈতিক অস্থিশীলতায় ব্যাপক চাপের মুখে এশিয়ার অন্যতম এই অর্থনৈতিক কেন্দ্র। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গত বছরের তুলনায় দেশটিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

সিঙ্গাপুর: দুর্বল বৈশ্বিক চাহিদা, চীনের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্যনির্ভর এই অর্থনীতি। হাইটেক রপ্তানির ওপর খুবই নির্ভরশীল সিঙ্গাপুর। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিকসের চাহিদা কমায় সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে অন্ধকার নেমে আসছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে। 

দক্ষিণ কোরিয়া: এই বছরের শুরুর থেকে উদ্বেগ ছড়ায় যে মন্দায় পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষিণ কোরিয়াও ভুগছে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিকসের চাহিদা কমে যাওয়ায়। এই খাত দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশটির মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।