খেলাপি ঋণ বাড়ছে, স্বীকার করেন না অর্থমন্ত্রী: অর্থনীতিবিদ মইনুল

অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম। ছবি: ফাইল ছবি
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম। ছবি: ফাইল ছবি

ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও সেটি বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বীকার করতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম।

রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে আজ শনিবার বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘উন্নয়ন, বঞ্চনা ও অসমতা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম।

অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, দেশের ব্যাংক খাতের ২ থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। সেগুলো সফলভাবে লুকিয়ে ফেলে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়। তার সঙ্গে আরও হয়তো ৩৮ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করার কথাও বলা হয়ে থাকে। আসলে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা নয়, সেটি দ্বিগুণের বেশি হবে। অনেক পন্থায় টাকাগুলো লুট করা হয়েছে।

মইনুল ইসলাম আরও বলেন, ঋণ খেলাপি ঋণ যে বাড়ছে, সেটি বর্তমান অর্থমন্ত্রী স্বীকার করতে চান না। ব্যাংক থেকে তারা (ঋণ খেলাপি) আরও কীভাবে ঋণ বের করতে পারবেন উনি সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। সরকার বিষয়টি নিয়ে নিস্ক্রীয় । এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই উন্নয়নের ভাগ পোশাকশ্রমিক, কৃষক, নারী, গৃহকর্মী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পাচ্ছে না। পোশাকশ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা হওয়ার পর অনেকেই গর্ব করছেন। কিন্তু সেই মজুরিতে যে ১৫ দিনও শ্রমিকের চলে না সেটি কেউ বলছে না। কৃষক ধানের দাম, পাটের দাম পাচ্ছে না। তারা প্রতিনিয়ত জমিহারা হচ্ছে। নারী শ্রমিকেরা প্রবাসে গেলে সেখান থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরছেন। ফলে উন্নয়নের সঙ্গে বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে উন্নয়ন সঠিকভাবে এগিয়ে যায়।

সেমিনারের মূল আলোচক ইউএনডিপির দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান বলেন, উন্নয়নের আসল উদ্দেশ্য ও কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষ। যে উন্নয়ন মানুষের জীবনকে উন্নীত করে না, নারীকে পাশ কাটিয়ে যায়, পরিবেশের ক্ষতি করে, মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয় না সেটি আসলে প্রবৃদ্ধি। কোনোভাবেই উন্নয়ন না। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারণাটি বদলাতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ হচ্ছে সেটির মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। তার বাইরে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নানাভাবে। আমাদের সামাজিক বাঁধন আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। শিশু কিশোরের শিক্ষার অবস্থা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বড্ড বেশি ব্যবসায়িক হয়ে যাচ্ছে। এসব কিন্তু অশনিসংকেত।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিমাণগত বিষয়ের চেয়ে গুণগতমানের দিকে বেশি নজর দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন সেলিম জাহান।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।