গাড়ি কিনুন ঋণে

কেনার আগে শোরুমে দেখে নিচ্ছেন শখ ও প্রয়োজনের গাড়ি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
কেনার আগে শোরুমে দেখে নিচ্ছেন শখ ও প্রয়োজনের গাড়ি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

নিজের একটা গাড়ি কে চায় না। প্রতি মাসে যদি ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। তাহলে আপনিও হতে পারেন একটা গাড়ির মালিক। গাড়ি কিনতে ঋণ পাওয়া এখন আর কঠিন কিছুই নয়। সহজ শর্ত ও প্রতিযোগিতামূলক সুদহার—এ দুটো মিলেই গাড়ি এখন সচ্ছল গ্রাহকদের হাতের মুঠোয়। 

গাড়ি কিনতে দামের অর্ধেক জোগান দিচ্ছে ব্যাংক। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি কিনতে ধরতে গেলে পুরো ঋণই দিচ্ছে। তাই নিজের প্রয়োজনে গাড়ি কেনা এখন আর আহামরি কোনো স্বপ্ন নয়। তাই যাঁরা গাড়ির মালিক হতে চান, তাঁরা যোগাযোগ করুন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। বাংলাদেশের গাড়ি কেনার ঋণসেবা খুব বেশি দিন আগের নয়। তবে উন্নত দেশগুলোতে সবাই ঋণ নিয়েই গাড়ি কিনে থাকেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রাহক ভেদে গাড়ির ঋণের সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। এসব ঋণ ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদি। গাড়ি কেনার পরের মাস থেকেই ঋণ শোধ শুরু করতে হয়। ঋণে কেনা গাড়ির মালিক হয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক দুজনই। ঋণ শোধ হয়ে গেলে পুরো মালিকানা গ্রাহকের নামে স্থানান্তর হয়। নতুন বা রিকন্ডিশন্ড দুই ধরনের গাড়ি কিনতেই এ ঋণ পাওয়া যায়। আর গাড়ি ঋণের প্রক্রিয়া শেষ হতেও বেশি দিন লাগে না। পেশাভেদে শিক্ষক, চিকিৎসক, নারী উদ্যোক্তা ও তরুণ নির্বাহীরা গাড়ি কিনতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। 

তবে মনে রাখতে হবে, ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গাড়ি জব্দ করে ফেলে। এরপর ঋণ শোধ করতে সেই গাড়ি বিক্রি করে দেয়। এ জন্য গাড়ি ঋণের ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই চিন্তামুক্ত। 

এবার দেখে নেওয়া যাক গাড়ির ঋণ নিতে কী কী নথিপত্র প্রয়োজন। লাগবে আবেদন ফরম, ছবি, জামানতদারের ছবি ও আইডি, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, আগের ঋণ থাকলে তার বিবরণী, আবাসিক পরিচয় নিশ্চিত হতে বিদ্যুৎ বা পানির বিল। আর যে গাড়ি কিনতে চান তার মূল্যতালিকা। 

আইডিএলসির কনজ্যুমার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ জাভেদ নূর এ নিয়ে বলেন, গাড়ির ঋণ তুলনামূলক নিরাপদ। ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে আদায় হয়ে যায়। তবে এখন গাড়ির ঋণের চাহিদা একটু কম। আর সব প্রতিষ্ঠানের হাতে ঋণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকাও নেই। 

গাড়ি কিনতে আগে ব্যাংকের ২০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার সুযোগ ছিল, ২০১৪ সালে তা বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে গাড়ি কেনায় ঋণ ও নিজস্ব অর্থের অনুপাতে পরিবর্তন এনে ৫০: ৫০ করা হয়। আগে গাড়ির দামের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ঋণ দিতে পারত ব্যাংক। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিচ্ছে। 

 সূত্রমতে, গ্রাহকদের সুবিধা দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজেরাই গাড়িবিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। বর্তমানে গাড়ি কিনতে ঢাকা, ইস্টার্ণ, ডাচ্-বাংলা, পূবালী, প্রাইম, সিটি, ইসলামী, ব্র্যাক, ইউসিবি, এমটিবি, এক্সিম, ট্রাস্ট, ওয়ান, আইএফআইসি, এবিসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। আর বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এইচএসবিসিরও গাড়ির ঋণ সুবিধা আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইডিএলসি, আইপিডিসি, লঙ্কাবাংলাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ সুবিধা মিলছে। 

লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের রিটেইল বিভাগের প্রধান খোরশেদ আলম বলেন, ঋণ বা লিজ নিয়েই সবাই গাড়ি কিনে থাকে। অন্য দেশগুলোতেও একই প্রথা। ঋণসুবিধার কারণেই মধ্যবিত্তরা গাড়ি কেনার সাহস করছে। 

>

পরামর্শ: গাড়ি

গাড়ি কেনার আগে জেনে নিন 

আব্দুল হক

নতুন গাড়ির প্রতিই মানুষের আকর্ষণ বেশি। যাঁদের নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের ভরসা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। তাঁদের জন্যই পাঁচ পরামর্শ 
১. গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সব ধরনের তথ্য জানাটা খুব জরুরি। যে প্রতিষ্ঠান সব ধরনের তথ্য দেয় যাবেন সেখানেই। এখানে স্বচ্ছতা একটা বড় দিক। অবশ্যই সবকিছু জেনে তারপরেই গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

২. গাড়িটি কেমন—এটিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি গাড়ি আসে জাপান থেকে, নিলামের মাধ্যমে। নিলামে আনা গাড়ির প্রকৃত অবস্থা জানা সহজ। কেননা, নিলামের সময় প্রতিটি গাড়ির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে একটি নথি তৈরি করা হয়, যাকে বলে অকশন শিট। এখানেই থাকে সব ধরনের তথ্য। এর মধ্যে গাড়ির গ্রেড হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে গাড়িটি দেখতে কেমন, তা এক্সটেরিওর গ্রেডের বিষয়। এর গ্রেড চারটি। যেমন, ‘এ’ গ্রেড ধরতে গেলে প্রায় নতুন, ‘বি’ গ্রেড হলে সহজে পরিষ্কার করা যায়, ‘সি’ গ্রেড মানে দাগ থাকবে। আর ‘ডি’ গ্রেড মানে একদমই ভালো না।

অন্যদিকে ভেতরের দিক থেকে গ্রেডগুলো হলো এ রকম—‘এস’ মানেই ধরতে গেলে নতুন, খুবই অল্প চলেছে, দামও বেশি। ‘৬’ নম্বর গ্রেডও নতুনের মতোই, চলেছে কম। হয়তো সামান্য ব্যবহার করে বিক্রি করে দিয়েছে কেউ। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৪.৫, ৪, ৩.৫ ও ৩ গ্রেডের গাড়ি আছে। ‘৪’ নম্বর গ্রেডের গাড়িই বেশি পাওয়া যায়। বেশির ভাগ গাড়ি ব্যবসায়ী এই গ্রেডের গাড়ি বেশি আনেন। সর্বশেষ গ্রেড হচ্ছে ‘আর’। বড় ধরনের মেরামত দরকার এই গাড়ির।সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনায় গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।ফলে দেখেশুনে, যাচাই করে তবেই গাড়ি কেনা উচিত। 

গাড়ির মাইলেজ বা কত কিলোমিটার চলেছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।গাড়ির মূল্য নির্ধারণে ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজের উদাহরণ দিতে পারি। দেড় লাখ কিলোমিটার চলেছে এমন একটি আমি প্রায় ১২ বছর ব্যবহার করেছি। পরে এটা বিক্রি করেছি কাছাকাছি দামে।  

৩. গাড়ি আমদানির নথিগুলো দেখে নিলে ঠকবেন না। বিশেষ করে ইনভয়েস, বিল অব লোডিং, বিল অব এন্ট্রি, জাপানের জাপান অটোমোবাইল এপ্রাইজাল ইনস্টিটিউটের সার্টিফিকেট।  

৪. বিক্রেতাই গাড়ি ব্যবহারের যাবতীয় কাজ করে দেন। বিশেষ করে ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস, মূল কাগজপত্র ইত্যাদি। শুরুতে একটা রসিদ দেবে। সেটি দেখালে পরে মূল কাগজপত্র পাওয়া যাবে। সুতরাং সবকিছু বুঝে নিন 

৫. অবশ্যই ভালো ও প্রতিষ্ঠিত গাড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হবে। কেননা, বিক্রয়-পরবর্তী সেবা থাকাটা জরুরি।সবাই এই সেবা দেয় না। আবার গাড়ি আবার প্রতারণার স্বীকার না হতে চাইলেও প্রতিষ্ঠিতদের কাছে যেতে হবে।

আব্দুল হক: সভাপতি, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)