চিনি-তেলে করের প্রভাব

বাজেটে তেল ও চিনির ওপর কর বাড়ানোর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। চিনির দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর অনুমোদন প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত।

বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (মূসক/ভ্যাট) কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড তাদের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে অপরিশোধিত চিনির টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (কোনো পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে যে শুল্ক আরোপ হয়) ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৩০ শতাংশ। পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়। ফলে সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনিতে কর দাঁড়ায় ২১ টাকার মতো, যা আগের চেয়ে প্রায় ৫ টাকা বেশি। 

বাজেটে ভোজ্যতেলের ভ্যাট ছাড় তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়। এতে আমদানিতে আয়কর বাবদ বাড়তি খরচ চাপবে না। 

বাজেটে নতুন কর কাঠামোর আগে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো এক স্তরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিত। নতুন করে তিন স্তরে ভ্যাট আরোপ করা হয়। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিডেট তাদের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়ায়। অবশ্য রূপচাঁদাসহ অন্য কোম্পানিগুলো গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে চিঠি দেয়। 

তেলের দাম বাড়ানো যৌক্তিক কি না, তা পর্যালোচনা করে ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে বলা হয়, নতুন কাঠামোয় এক লিটার তেলে ভ্যাট দাঁড়াবে ১৪ টাকা, যার মধ্যে নতুন করে বাড়বে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। অবশ্য অগ্রিম দেওয়া ভ্যাট সমন্বয় করা গেলে লিটারে ৩ টাকার বেশি বাড়ার কথা নয়। অগ্রিম আয়করের কারণে লিটারে সোয়া ২ টাকা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল। অবশ্য গত ২২ আগস্ট তা তুলে নেয় সরকার। 

>চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা
বোতলজাত সয়াবিন তেলে ভ্যাটের কারণে দাম লিটারে ৩ টাকা বাড়তে পারে


ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেলের দাম আমরা এখনো বাড়াইনি। সরকার দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করব আমরা।’

ঢাকার বাজারে এখন খোলা চিনি প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত চিনির দর কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, তারা এখন ৫৩-৫৪ টাকা কেজি দরে খোলা চিনি বিক্রি করছে, যা মাসখানেক আগেও ৫০ টাকার নিচে ছিল। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বলছে, এক মাসে চিনির দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে। 

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, বাজেটের আগে আমদানি করা চিনি এত দিন বাজারে বিক্রি হয়েছে। এখন নতুন চিনি এসেছে। এগুলো বাড়তি কর দিয়ে আনতে হয়েছে। তাই কোম্পানিগুলো চিনির দাম বাড়িয়েছে। 

 চিনি ও তেলের দাম বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে সংসারের ব্যয়ে। পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কয়েকটি মসলার দামও বেশ চড়া। তেল-চিনির
মতো পণ্যের দাম বাড়লে তা মূল্যস্ফীতির ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।