তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য খাতভিত্তিক তহবিল চাই

জসীম আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজেএম ফুটওয়্যার লিমিটেড
জসীম আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজেএম ফুটওয়্যার লিমিটেড
>

দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, তরুণ উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং নিজের ব্যবসা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রপ্তানিমুখী জুতা কারখানা আরজেএম ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম আহমেদ। এই তরুণ উদ্যোক্তা জুনিয়র চেম্বার চট্টগ্রামের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ মিলাদ।

প্রথম আলো: ব্যবসায় কীভাবে এলেন?

জসীম আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করি ২০০৪ সালে। তখন ব্যবসায়ের নতুন নতুন ভাবনা ছিল মাথায়। সেই ভাবনা বাস্তবায়ন করতে দরকার ছিল পুঁজি। পুঁজি সংগ্রহের জন্য পোশাকশিল্পের সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করি। অভিজ্ঞতার অভাবে সেখানে প্রতারণার শিকার হই। পরে চাকরিতেও যোগদান করি। ২০১২ সালে পাঁচ হাজার কর্মীর একটি রপ্তানিমুখী জুতা কারখানার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিই। ৩১ বছর বয়সে এই দায়িত্ব নিলেও সব সময় নিজে ব্যবসা করার চিন্তা ছিল। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কয়েকটি ব্যবসার পাশাপাশি কালুরঘাটে আরজেএম ফুটওয়্যার লিমিটেড নামের রপ্তানিমুখী জুতার কারখানা গড়ে তুলি। এখন এই কারখানা থেকে স্পোর্টস শুর সোল রপ্তানি হচ্ছে। 

প্রথম আলো: উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রথমে কী কী দরকার?

জসীম আহমেদ: উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ব্যবসায়িক জ্ঞান। আপনি যে পণ্য বা ধারণা নিয়ে ব্যবসা করবেন, সেটি সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, যেটির বিকল্প নেই। সৎ সাহস থাকতে হবে। আবার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে। এ ছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা থাকাও জরুরি।

প্রথম আলো: উদ্যোক্তা হতে গিয়ে তরুণেরা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হন?

জসীম আহমেদ: নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কারখানা গড়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সনদ নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সনদ কখন পাওয়া যাবে, তার জন্য কোনো সময়সীমা নেই বা থাকলেও তা মানা হয় না। উৎপাদনমুখী কারখানা গড়তে তরুণদের জন্য উপযুক্ত জমি পাওয়া কঠিন। যেকোনো নতুন উদ্যোগে ব্যাংকঋণ পাওয়া তো এখন সৌভাগ্যের ব্যাপার।

প্রথম আলো: ব্যাংকঋণ পেতে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?

জসীম আহমেদ: যেকোনো নতুন উদ্যোগে ব্যাংকঋণ পেতে হলে জামানত দিতে হয়। উৎপাদনশীল কারখানা হলে নিজস্ব জমি থাকা প্রাথমিক শর্তের মধ্যে পড়ে। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য শুরুতে জমিতে বিনিয়োগ করা বড় সমস্যা। ব্যাংকে তারল্যসংকটের কারণে এখন ঋণ পাওয়া আগের চেয়ে কঠিন হয়ে গেছে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পথে এটি বড় বাধা। অন্যদিকে শতভাগ নিজের অর্থায়নে কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

প্রথম আলো: দেশে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ কেমন?

জসীম আহমেদ: বিনিয়োগের জন্য আগের চেয়ে গ্যাস–বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত সুবিধার অনেক উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আছে। সরকার তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য সামগ্রিক কোনো নীতিমালা নেই। যেমন তহবিল গঠন করলেও কারা পাচ্ছে বা কারা পাবে, কী ধরনের খাতের জন্য পাবে—এসব বিষয় সুস্পষ্ট নয়।

প্রথম আলো: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কী করা দরকার বলে মনে করেন?

জসীম আহমেদ: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য খাতভিত্তিক তহবিল গঠন করা যেতে পারে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে। আবার অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্পাঞ্চলে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য জমি বরাদ্দ দিতে পারে সরকার। পুরোনো শিল্পাঞ্চলে অনেক শিল্প প্লট খালি আছে। সেগুলোতেও খাতভিত্তিক শিল্পকারখানার জন্য তরুণ উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া যায়। উৎপাদনমুখী খাতের জন্য কম সুদে ও দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য যা যা সনদ ও সেবা দরকার, সব এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। তৃণমূল থেকে উদ্যোক্তা উঠে আসার মতো সুবিধা তৈরি হলেই অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হবে।

প্রথম আলো: বর্তমানে বন্দরসুবিধা কেমন? 

জসীম আহমেদ: রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার জন্য বন্দরসুবিধা প্রথম শর্ত। বন্দর দিয়ে প্রথমে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। সেই কাঁচামাল থেকে পণ্য তৈরি করে আবার বন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এ দুই ধাপে যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমরা বন্দরসুবিধার উন্নতি করতে পারি। তাহলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে পারব। বন্দরে কয়েক মাস আগেও জট ছিল না। ঘূর্ণিঝড়ের পর জট বেড়েছে। কাঁচামাল হাতে পেতে সময় লাগছে। তাতে পণ্য উৎপাদনে সময় বেড়ে যাচ্ছে। পোশাক, জুতাসহ বেশির ভাগ রপ্তানি পণ্যের ডিজাইন বা নকশা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। দেরি হলে চলে না। সরকার বন্দরকেন্দ্রিক অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেগুলো দ্রুত কার্যকর করা উচিত।