নতুন ধারার রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনজুরুল হক

নিজের রেস্তোরাঁয় মনজুরুল হক। ছবি: সংগৃহীত
নিজের রেস্তোরাঁয় মনজুরুল হক। ছবি: সংগৃহীত

দুবাইতে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মনজুরুল চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সিঙ্গাপুরে যান পড়তে। সেখানকার থেমস বিজনেস স্কুলে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজ করেছেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। লক্ষ করেছেন রেস্তোরাঁ–সংস্কৃতি। চট্টগ্রামে ফিরে তাই তাঁর সহজে নজর কাড়ে বিদ্যমান রেস্তোরাঁর পরিবেশ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হ্যাংআউটের রেস্তোরাঁ কই? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিসফেরত বন্ধুদের আড্ডার জায়গা কই? উঠতি উদ্যোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিজনেস প্ল্যান করার জায়গা কই? এসব বিবেচনায় মনজুরুল হক ২০১২ সালের শেষ দিকে নগরীর বাদশা মিঞা পেট্রলপাম্পের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকানের ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন বারকোড ক্যাফে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কফির কাপে ঝড় তোলা যায়। কেউ কিছু বলে না। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চাইলে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারও জোটে। ‘শুরুতে আমার টার্গেট ছিল, দিনে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি’, জানালেন মনজুরুল হক। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না–যেতেই খবর রটে গেল শহরজুড়ে। কাজেই পাশের অংশটাও বাড়াতে হলো, সুযোগ দিতে হলো পার্টি করার। আর সেই ছোট্ট ‘পাঁচ হাজারী’ বারকোড ক্যাফে থেকে এখন মনজুরুলের বারকোড গ্রুপে কর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। কেবল বেকারদেরই কাজ দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও তৈরি করেছেন। 

তবে মনজুরুলের মতো উদ্যমী তরুণ একটিমাত্র ক্যাফে করে থেমে যাবেন, এটি তো হয় না। দেশের অন্য অনেক শহরের মতো একসময় চট্টগ্রামের স্ট্রিট ফুড কালচারও ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু নজর না থাকায় সেগুলোর মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়ে যায়। মনজুরুল ভাবলেন, স্ট্রিট ফুডই করবেন, কিন্তু স্বাস্থ্যকরভাবে, পরিচ্ছন্নভাবে। চীন থেকে কারিগর নিয়ে এসে বানালেন ফুচকা বানানোর যন্ত্র। ব্যস, হাতের ছোঁয়া থেকে মুক্তি। ২০১৫ সালে শুরু করেন বারগুইচ ফিউশন ক্যাফে। চটপটি, ফুচকাসহ নানান স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী নানান ধরনের স্ট্রিট ফুডের সমাহার ঘটান খোলামেলা পরিবেশের ক্যাফেতে। খুব দ্রুতই ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রামের অনেকেরই সন্ধ্যাকালীন গন্তব্য হয়ে ওঠে এই ক্যাফে; যা চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় আড্ডাস্থলও হয়ে উঠতে সময় নেয়নি। 

 তবে দুটি বিশেষ উদ্ভাবনের জন্য মনজুরুলকে মনে রাখতে হবে আমাদের। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য মেজবানির খাবার নিয়ে সারা দেশে প্রচুর আগ্রহ। চট্টগ্রামের অনেক মেহমান মেজবানি খেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেই বিপদে পড়েন। কারণ, বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া মেজবানি কোথায় পাবেন? মেজবানি অনুষ্ঠানে তো রবাহূত নিয়ে যাওয়া যায় না। কাজেই ২০১৬ সালে চালু হয়ে গেল ‘মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন (মেজবান খেতে আসুন) ’। দুপুরে-রাতে যেকোনো সময় চাইলেই মেজবান খেতে পারবেন।

মনজুরুলের এরপরের কাজটি আরও চমকপ্রদ। অনেকেরই মাঝেমধ্যে বিয়েবাড়ির মজার খাবার খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বিয়ের কোনো দাওয়াত না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গতানুগতিক ধাঁচের গ্রামের বাড়ির আদলে মনজুরুল হক বিয়েবাড়ির খাবার মেনু নিয়ে ২০১৭ সালে চালু করলেন ‘বীর চট্টলা’। এ পর্যন্ত ঢাকার বনানীসহ বারকোড নামে রয়েছে ১২টি রেস্তোরাঁ। মাসখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বারকোড গ্রুপের নতুন আরও একটি রেস্তোরাঁ হবে বলে জানালেন মনজুরুল হক। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের তরুণেরা কয়েক বছরে সাত শতাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ তাঁকে সম্মানিত করেছে ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা ২০১৭-এ।