চাকরি পেতে স্নাতক হতেই হবে?

চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি থাকলেই যে গুগল, অ্যাপল ও নেটফ্লিক্সের মতো বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যাবে, সেই দিন সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। সিমেন্স ইউএসএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বারবারা হাম্পটন ও অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক ইতিমধ্যে এসব চার বছরের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। টিম কুক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপল গত বছর যত মানুষ নিয়োগ দিয়েছে, তাঁদের অর্ধেকের চার বছরের ডিগ্রি নেই। যাঁদের দিয়ে কাজ হচ্ছে, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশের নিয়োগদাতারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, টিম কুকরাও সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন—প্রয়োজনীয় দক্ষতার ঘাটতি। টিম কুকের যুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধরনের দক্ষতা লাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কলেজে তা শেখানো হয় না। তিনি মূলত কম্পিউটার প্রকৌশলীদের পরিপ্রেক্ষিতে কোডিং দক্ষতার ঘাটতি দেখতে পান। 

অন্যদিকে সিমেন্সের প্রধান নির্বাহী বারবারা হাম্পটন মনে করেন, চার বছরের ডিগ্রি থাকলেই যে কেউ ক্যারিয়ার শুরুর জন্য একদম প্রস্তুত, তা মনে করার কারণ নেই। চাকরির বিজ্ঞাপনে কেন চার বছরের ডিগ্রির কথা উল্লেখ করা হয়, তা বুঝতে পারেন না তিনি। এই ডিগ্রি দিয়ে যে আদতে কী ঘটে, তা বোঝা কঠিন। সম্ভবত এতে মানবসম্পদ বিভাগের সুবিধা হয়। ডিগ্রির শর্ত না থাকলে যে শত শত আবেদন নিয়ে তাঁদের হিমশিম খেতে হতো, ডিগ্রির শর্ত তাঁদের সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে। 

এ অবস্থায় গুগল ও অ্যাপলের মতো বড় বড় কোম্পানি প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে, সে তাঁদের ডিগ্রি থাকুক বা না থাকুক। পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডইন সম্প্রতি বলেছে, ইদানীং যেসব কোম্পানিতে কাজ করতে মানুষ মুখিয়ে থাকেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই চাকরির জন্য কলেজ ডিগ্রি চাইছেন না। লিঙ্কডইন বলছে, ইলেকট্রনিক যন্ত্র কারিগর, যন্ত্র ডিজাইনার ও বিপণন প্রতিনিধির মতো পদে কলেজের ডিগ্রিবিহীন মানুষের নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। 

তবে তার মানে এই নয় যে কলেজ ডিগ্রি থাকলে দাম পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী কর্মীরা মধ্যম সারির ডিগ্রিবিহীন কর্মীদের চেয়ে বেশি আয় করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ডিগ্রি নিতে গিয়ে অনেক ছাত্র ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন। সে জন্য অনেকেই কলেজ ডিগ্রি নিতে পারেন না। মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হাইস্কুল শেষ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশ দুই বছর বা চার বছরের ডিগ্রি নেন। আবার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বেকার। মানে তাঁরা যেসব কাজ করছেন, তার জন্য কলেজ ডিগ্রির দরকার হয় না। 

অনেকেই আশঙ্কা করছেন, কারখানায় অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থা শুরু হওয়ার কারণে বহু শ্রমিক কাজ হারাবেন। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা সে জন্য তরুণ কর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। বিজনেস ইনসাইডার-এর প্রতিবেদক রিচ ফেলনি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, স্কুলের শিক্ষার সঙ্গে কর্মকালীন প্রশিক্ষণের সমন্বয় ঘটানো গেলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করা যায়।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার