কাঁচাবাজারের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে তিন পণ্য

সবজির দাম তুলনামূলক কম। ঈদুল আজহার পরে মাংসের বাজারেও চাহিদা নেই, উত্তাপও নেই। ইলিশের দাপটে অন্য মাছের দাম তেমন একটা চাপ তৈরি করতে পারছে না। কিন্তু কাঁচাবাজারের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে তিনটি পণ্য পেঁয়াজ, রসুন ও আদা।

বাজারে এখন পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকা। ঈদুল আজহার আগেও যা ৪০ টাকার নিচে ছিল। চীনা রসুন সাধারণত ৮০-১২০ টাকার মধ্যে থাকে। সেটা এখন ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। ১০০ টাকা কেজির আশপাশের দামে আদা কিনতে অভ্যস্ত মানুষকে এখন দাম দিতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকার বেশি।

এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ নয়, রসুন-আদার বাজারের এই অবস্থা প্রায় চার মাস ধরে। কখনো কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে। খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ার আগেই দাম আবার বেড়ে যায়। সামনে উল্লেখযোগ্য হারে দাম কমবে, এমন আশাও দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

মধ্য পীরেরবাগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভ্যানগাড়িতে করে পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি করছিলেন এক বিক্রেতা। তাঁর কাছে রসুন কিনতে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান শিকদার বলেন, সেই যে রসুন-আদার দাম বাড়ল, আর তো কমে না। এরপর বাড়ল পেঁয়াজের দাম। মসলা কিনতেই এখন সবচেয়ে বেশি চাপ।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪২-৪৬ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪১-৪২ টাকা, চীনা রসুন ১১৫-১১৮ টাকা, দেশি রসুন ১১৮-১২২ টাকা এবং আদা ১১৬-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

দেশের আদা ও রসুনের বাজার অনেকটা চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীনে দাম বেশ চড়া। আমদানিকারকেরা বলছেন, সেখানে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। এ কারণে সব দেশেই রসুন ও আদার দাম বেশি। দেশে এ দুটি পণ্য উৎপাদন হয় চাহিদার খুব সামান্য অংশ। তাই চীনা রসুনের সঙ্গে দেশি রসুনের দামও বেড়ে গেছে।

>

রসুন ও আদার দাম দীর্ঘ সময় ধরে চড়া
পেঁয়াজের দামেও সুখবর নেই
রসুনের কেজি ১৫০-১৭০ টাকা
আদার কেজি ১৫০ টাকা
পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকা

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক মো. আবদুল মাজেদ বলেন, চীনে মৌসুম শেষ হলো দুই মাস আগে। এবার সেখানে উৎপাদন ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। ফলে নতুন পণ্যে দাম কমানো যায়নি। বরং বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নতুন রসুন উঠবে আগামী চৈত্র মাসে। ভারতেও দাম চড়া। সব মিলিয়ে দেশে দাম সহজে কমার আশা নেই।’

পুরান ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, তিনি মিসর ও পাকিস্তানে পেঁয়াজের দর কত, আমদানির পর বাংলাদেশে খরচ কত পড়তে পারে তার খোঁজ নিয়েছিলেন। তাঁর হিসাবে, মিসরের এক কেজি পেঁয়াজের খরচ পড়বে ৩৫ টাকার বেশি। পাকিস্তানি পেঁয়াজ আমদানি করলে খরচ পড়বে কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা। ফলে সেগুলো আনা লাভজনক হবে না।

নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে দেশের বাজারে আগাম পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তার আগে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে রাজধানীর বাজারে গত এক সপ্তাহে পণ্যের দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম একই আছে। সবজির দামও আগের মতোই। বেশির ভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দর ১৩০ টাকার আশপাশে। ফার্মের ডিমের ডজন (১২টি) ১০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।